হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে গেলে হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ হ্রাস পায়, স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এটি অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ।বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনে একজন রোগী হাড় ভাঙার এক বছরের মধ্যে মারা যায়।
সঠিক সময়ে অস্টিওপোরোসিসে চিকিৎসা না নিলে দেহের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে সতর্ক করছে চিকিসা বিজ্ঞান।
হাড়ের ক্ষয় রোগের কারণ:
হাড়ের গঠন ক্ষয়ে স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, নারীদের বেলায় ইস্ট্রোজেন আর পুরুষদের বেলায় টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব, থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিজনিত সমস্যা, পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ না করলে, জেনেটিক অথবা বংশানুক্রমিক রোগই মূল কারণ হাড় ক্ষয় রোগ হয়।
উপসর্গ:
অস্টিওপোরোসিসে হাড় নীরবে ক্ষয় হতে থাকে। অনেক সময় হাড় ভাঙার মাধ্যমে এর উপসর্গ প্রকাশ পায়।
প্রধান প্রধান লক্ষণ:
.হাড় ও পেশিতে ব্যথা
• ঘাড় ও পিঠে ব্যথা
• আঙ্গুলগুলো দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়
• হাতের গ্রিপের শক্তি কমে যায়
• হাড় ও শরীরে ব্যথা অনুভব হওয়া
• ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা বাড়ে
• খুব সহজে দেহের বিভিন্ন স্থানে হাড় বিশেষ করে মেরুদণ্ড, কোমর বা কব্জির হাড় ভেঙে যাওয়া, কুঁজো হয়ে যাওয়া।
ঝুঁকি কাদের বেশি:
• মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ-পরবর্তী নারী।
• পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’না গ্রহণ করলে।
• ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা।
• শরীরচর্চা না করা।
• রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত।
• এইডস, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও এসব রোগের ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
• বহু সময় কটিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে।
হাড় ক্ষয় রোধের উপায়:
• সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
• ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাওয়া
• নিয়মিত শরীরচর্চা করা
• ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা
• ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো।
হাড় ক্ষয় রোধের ব্যায়াম:
অস্টিওপোরোসিস রোগীদের নিয়মিত ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আয়রন বা যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। বরং শরীরের ওজনকে কাজে লাগিয়ে ব্যায়াম করুন।
এই ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে হাড় ও পেশির স্বাস্থ্যের একসঙ্গে উন্নতি হয়। এক্ষেত্রে এই কয়েকটি ব্যায়াম নিয়মিত করুন-
• জগিং
• লাফানদড়ি
• স্টেপ এরোবিক
• টেনিস খেলা
• বাগান পরচর্যা করা
• ডান্স, সিঁড়ি ওঠানামাও করতে পারেন। এর মাধ্যমেই হাড় নিজের হারানো শক্তি ফিরে পাবে।
বাড়াতে হবে পেশির জোর:
শুধু হাড়ের দিকে খেয়াল রাখলে হবে না, বরং পেশির জোর বাড়াতে হবে। পেশি শক্তিশালী হলে হাড়ের ক্ষয় আটকানো যায়। এমনকী হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও কয়েকগুণ কমে।
তাই নিয়মিত কয়েকটি মাসল স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ করুন-
• ইলাস্টিক ব্যান্ড দিয়ে নানা কসরত
• ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ
• ওয়েট মেশিন ব্যবহার ইত্যাদি। এই ব্যায়াম সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার করতে হবে।
শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিবেচনায় দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়। কাজেই অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তার দিকে সচেতন হওয়া উচিৎ। জীবনযাত্রার সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত।