অস্ত্র আমদানিকারক থেকে রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে তুরস্ক। প্রতি বছরই বাড়ছে তাদের অস্ত্রের বিক্রি। এক দশক আগেও আঙ্কারার রপ্তানি ছিল এক দশমিক নয় বিলিয়ন।
আর ২০২৪ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার। তুর্কি অস্ত্রের ক্রেতা পুরো ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশ।
সামরিক দিক থেকে বিশ্বের নবম স্থানে থাকা তুরস্ক হুট করে এমন অবস্থানে চলে আসেনি। বরং দেশীয় অস্ত্র ভান্ডার শক্তিশালী করার পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে ১৯৮৫ সালে গঠন করে দ্য ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট এন্ড সাপোর্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিস (এসএজিইবি)।

এসএজিইবির ফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। এ মুহূর্তে বিশ্বে তুর্কি নির্মিত বায়রাক্টার টিবি২ ড্রোনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
২০১৪ সালে এটি তৈরি করে তুরস্ক। রাশিয়ার বিপক্ষে যুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে ইউক্রেন।
এ ছাড়া আনকা-এস ড্রোনও বেশ জনপ্রিয়। এটি দুইশ কেজি ওজন পরিবহন করতে সক্ষম। শুধু ড্রোনই নয়, দেশীয় প্রযুক্তিতে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেটও তৈরি করছে তুরস্ক। যেটির নাম কান। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ এর বিকল্প হিসেবে তুর্কি বাহিনীতে যুক্ত হবে এটি।
জার্মানির লিওপার্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামসের মতো শক্তিশালী যুদ্ধ ট্যাঙ্ক অলটাই তৈরি করছে দেশটি। মাইন প্রতিরোধী যানও যুক্ত হবে তুরস্কের সেনা বহরে।
পাল্টাপ্রতিরোধ হিসেবে ব্যবহৃত কিরপি ট্যাঙ্ক আছে তুরস্কের। এতে রয়েছে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী প্রযুক্তি সম্পন্ন এফএনএসএন ডিফেন্স ব্যবস্থা।

সেনা ছাড়াও নৌ বাহিনীর জন্য দ্য ন্যাশনাল শিপ প্রজেক্টের অধীনে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত ফ্রিগেট, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন তৈরি করছে দেশটি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জাহাজ টিসিজি আনাদোলু ২০২৩ সালে সমুদ্রে মোতায়েন করেছে নৌবাহিনী।
এ ছাড়া যুদ্ধ জাহাজগুলোয় রয়েছে সহজে বহনযোগ্য অস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বল্প বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। দেশটির দূরপাল্লার ক্ষেত্রণাস্ত্র আটমাকা।
দেশীয় অস্ত্রে স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে অস্ত্র রপ্তানিতে সক্ষম হয়ে উঠতে কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছে দেশটিকে। সাইপ্রাসে সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযোগে ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি তুরস্কের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৯০ সালে বিক্রিকৃত সাজোয়া যান শুধু দেশের ভেতর এবং ন্যাটোর সদস্য নয় এমন দেশের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারবে এই শর্তে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে জার্মানি।
সর্বশেষ ২০২০ সালে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এসব বাধা অতিক্রম করে-ই নিজস্ব প্রযুক্তিতে অস্ত্র তৈরি করে রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে দেশটি। বর্তমানে তিন হাজার অস্ত্র কোম্পানি রয়েছে তুরস্কে।

সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সিটিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী অস্ত্র রপ্তানিতে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১১তম। গত বছর ১৭৮টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে দেশটি।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের তুলনায় দেশটির রপ্তানি বেড়েছে ১০৩ শতাংশ। আর ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান এবং কাতার।
এ ছাড়া ইরাক, ইউক্রেন, কেনিয়া, বাংলাদেশ ও জাপানসহ ৩১টি দেশে বিক্রি করেছে বায়রাক্টার ড্রোন।
দেশটির সামরিক ব্যালেন্স ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সংখ্যা তিন লাখ ৫৫ হাজার দুইশ জন।
এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে ২ লাখ ৬০ হাজার ২০০, বিমান বাহিনীতে ৫০ হাজার, নৌবাহিনীতে ৪৫ হাজার, প্যারামিলিটারি ১ লাখ ৫৬ হাজার এবং রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০০। আর প্রতিরক্ষা বাজেটে দেশটির খরচ হয় ৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন।
তুরস্কের যুদ্ধ বিমান রয়েছে ২৯৪টি। এ ছাড়া ড্রোন ৫৮ এবং ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আছে ৩২টিরও বেশি। অন্যদিকে সাবমেরিন ১২, ফ্রিগেট ১৬ এবং টহল ও যুদ্ধ জাহাজ আছে ৫০টি।
আর প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ২৩৭৮, সাঁজোয়া পার্সনাল ক্যারিয়ার ৬৪০৩, পদাতিক যুদ্ধ যান ৬৪৫, অ্যাটাক হেলিক্টার ৯১, গোলা বা কামান (আর্টিলারি) ২৭৬২ এবং বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র আছে ১৪০৪টি।
সূত্র: আল জাজিরা ও আনাদোলু