সাধারণত একটি জরায়ু বা গর্ভাশয়ে দুইটি বা তিনটি বা ততোধিক সন্তান জন্ম দেয়ার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে বিশ্বজুড়ে। তবে এবার একই নারীর দুই জরায়ুতে দুই সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন।
সম্প্রতি এমনই এক বিরল ঘটনা ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের বার্মিংহাম হাসপাতালে। কেলসি হ্যাচার নামের একজন নারী, যার দুই জরায়ুতে সুস্থ যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
১০ ঘন্টার ব্যবধানে দুই জরায়ূকে দুই সন্তান
কেলসি হ্যাচার-ক্যালেব দম্পতি রক্সি লায়লাকে তাদের কোলে স্বাগত জানিয়েছেন। এর ঠিক ১০ ঘন্টা পর তাদের আরেক সন্তান রেবেল লেকেনকে স্বাগত জানান তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন খবর প্রকাশ পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। এই দম্পতির আগের তিন সন্তান রয়েছে।
আরও পড়ুন: মনিং সিকনেস এর কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা
হাসপাতালের বেডে থেকেই কেলসি হ্যাচার সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, ‘‘আমরা স্বপ্নেও এভাবে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারিনি, তবে আমাদের দুটি সুস্থ শিশু কন্যাকে এই পৃথিবীতে নিরাপদে নিয়ে আসা সর্বদাই লক্ষ্য ছিল। হাসপাতাল আমাদের এটি অর্জনে সহযোগিতা করেছে। আমার দুই সন্তানের জন্ম কাহিনী স্মরণীয় হয়ে থাকবে।‘’
ইনস্টাগ্রামে হ্যাচার লিখেছেন “আমাদের অলৌকিক শিশুদের জন্ম হয়েছিল! তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা পরিসংখ্যানগতভাবে যথেষ্ট বিরল ছিল যে তাদের কেবল এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং তাদের নিজস্ব জন্মদিনও রয়েছে।”
কয়েকদিন পর তিনি ইউটিউবে ভিডিও শেয়ার করে আবার লিখেন “আমি সবার সাথে পুরো জন্মের গল্প শেয়ার করার জন্য অপেক্ষায় না থেকে তা সবাইকে জানিয়ে দিলাম। আমরা সবাই এখন বাড়িতে আছি।”
আরও পড়ুন: ৮ এপ্রিল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ কোটি মানুষ একত্রিত হবে যেখানে
হ্যাচারের ডবল জরায়ু রয়েছে এবং তিনি দুই পাশে একটি করে সন্তান নিয়ে গর্ভবতী ছিলেন, এটি একটি বিরল গর্ভাবস্থা, যা মেডিকেল সায়েন্সে ডিক্যাভিটারি প্রেগন্যান্সি নামে পরিচিত হলেও বাস্তবে তা খুব দেখা যায় না। দুই জরায়ুতে দুই সন্তানের গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে প্রতি ১০ লাখে এক জন নারীর মধ্যে।
১৭ বছর বয়সে হ্যাচার জানতে পারেন তার দুই জরায়ু
হ্যাচার দুটি জরায়ুর কথা জানতে পারেন যখন তার বয়স ১৭ বছর হয়। তখন তাকে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি জরায়ু ডিডেলফিস বলা হয়। এটি একটি বিরল জন্মগত অসঙ্গতি, যা ০.৩% নারীতে হতে পারে।
হ্যাচার ইতিমধ্যেই তিন সন্তানের জননী, তবে আগে কখনও উভয় গর্ভে গর্ভবতী হননি। চুতর্থবার আবার গর্ভবতী হওয়ার পরে ও প্রাথমিক আল্ট্রাসাউন্ড সম্পন্ন করার পরে দুই জরায়ুতে দুই সন্তানের ভ্রুণ বড় হওয়ার খবর জানতে পারেন।
ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা দেখার সুযোগ পান না ডাক্তাররা
হ্যাচারের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. শ্বেতা প্যাটেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেন, ” আমি ইতিমধ্যেই হ্যাচারের তিনবার মা হওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী। চতুর্থবার গর্ভাবস্থার মাধ্যমে তাকে যত্নায়াত্তি করছিলাম। আমি জানতাম যে তার ডবল জরায়ু ছিল, কিন্তু আগে শুধুমাত্র একটি করে সন্তান ছিল তার জরায়ুতে। তবে দুটি জরায়ুতে দুটি শিশু জন্ম দেয়া সত্যিকার অর্থে চিকিৎসা বিস্ময়কর ব্যাপার।”
আরও পড়ুন: ডাইনোসর যুগের আগের প্রাণীর ফসিল সন্ধান
শ্বেতা প্যাটেল আরও লিখেন, ‘‘হ্যাচারের গর্ভাবস্থাকে উচ্চ ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনা করে তাকে ৩৯ সপ্তাহে প্রসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। ২০ ঘন্টা সম্মিলিত চেষ্টার পর দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তার।’’
‘‘প্রথম সন্তানের ১০ ঘন্টা পর আরেক কন্যা সন্তান হয় হ্যাচারের। হ্যাচারের গর্ভাবস্থা ছিল খুবই বিরল। অনেক চিকিৎসক পুরো ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা দেখার সুযোগ পান না।’’ বলে যোগ করেন ডা. শ্বেতা প্যাটেল।
দুই জরায়ুতে দুই সন্তান জন্মের ডাক্তারি ভাষা নেই
আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. রিচার্ড ডেভিস বলেন, “একটি ডবল সার্ভিক্স বা ডাবল জরায়ু’র ঘটনা সাধারণত ১% এর নিচে ঘটে।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছে।’’
অধ্যাপক প্যাটেল ও অধ্যাপক ডেভিসের মতে, দুটি গর্ভ ও দুটি সন্তানের জন্ম একটি জটিল ব্যাপার। ক্যাসলি হ্যাচারের এই গর্ভাবস্থাটি এতোটাই বিরল ছিল যে এটি ব্যক্ত করার জন্য কোনও সহজ ডাক্তারি ভাষা নেই। ক্যাসলি হ্যাচারের দুই সন্তানকে যমজ সন্তান হিসাবেই বিবেচনা করছেন চিকিৎসকরা।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ, রয়টার্স ও সিবিএস নিউজ