লরাইনোসরাস

সাগর-মহাসাগরের ভয়ঙ্কর ঘাতক লরাইনোসরাস

সাগর-মহাসাগরের মহাঘাতক মানেই ভয়ঙ্কর হাঙ্গর এটা সবার জানা। হাঙ্গরের রক্ত-মাংসের প্রতি নেশা, প্রতি বছর হাঙ্গরের শিকার হয়ে মানুষের প্রাণহাণি সবই হাঙ্গর সম্পর্কে মিথ রয়েছে।

যা অনেকটা গ্রাম-গঞ্জে কুমির নিয়ে মিথ এর মতো। শুধুই কি হাঙর বা কুমির, জলাশয়ের ঘাতক হিসেবে আরও ভয়ঙ্কর আছে যার নাম কিলার হোয়েল

তবে বিজ্ঞানের ইতিহাস বলছে প্রাগৌতিহাসিক ঘাতকদের তুলনায় হাঙর-কুমির একেবারে নস্যি প্রাণি। বরং লরাইনোসরাস নামের এক সামুদ্রিক প্রাণির কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, এক সময় তারা সাগর-মহাসাগরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বেড়াত।

                          আরও পড়ুন: মহাবিশ্বের আদি লগ্নে সময় পাঁচগুণ ধীরগতিতে চলতো

১৯৮৩ সালে সালে লরাইনোসরাস নামের মহাঘাতকটির জীবাস্ম প্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। তবে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এতোদিন বিশেষভাবে অজানা ছিল।

সম্প্রতি পোলিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্যালিওবায়োলজির গবেষণায় লরাইনোসরাস সম্পর্কে জানা গেছে। গবেষণা বলছে, এই ‘সি মার্ডারার’র চোয়াল ১.৩ মিটার লম্বা।

এদের আকৃতি টর্পেডোর অনেকটা মতো। এরা ১০.৪৫ থেকে ২০ কোটি বছর আগে সাগরে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালাতো।

সায়েন্টিফিক রিপোর্ট জার্নাল-এ এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ ১৬ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়। এ প্রাণীটি ৮০ কোটি বছর ধররে খাদ্য-শৃঙ্খলের শীর্ষে ছিল বলে প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়।

এদের চোয়াল এই সিমোলেস্টেস প্রজাতির অন্যান্য সি মার্ডারের চেয়ে চেয়ে অন্তত ১ ফুট বেশি লম্বা ছিল। তাই এরা সহজেই হাঙ্গর, সামুদ্রিক কচ্ছপসহ অন্যান্য শিকারী প্রাণীদেরও শিকার করতে পারতো নিমেষেই।

এদের শক্তিশালী চোয়াল ও নিচের দাঁতে সাহায্যে সহজেই বড় শিকারকে পাকড়াও করতে পারে। এই কারণে এরা সাগর-মহাসাগরের ভয়ঙ্কর প্রাণি হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এই প্রাণির ফসিলটি উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের বর্তমান গ্রান্ট ইস্ট এলাকায় পাওয়া যায়। ১৯৯৪ সালে এই প্রাণীটি নিয়ে বেলজিয়ামের জীবাস্মবিদ প্যাসকেল গডফ্রয়েট প্রথম সীমিত আকারের গবেষণা শুরু করেন।

ওই বছর ‘জার্নাল বুলেটিন দেজ অ্যাকাডেমি এট সোসাইটে লরিয়ান্স দেস সায়েন্সেস’-এ এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তবে সেটা বেশি আলোড়ন তুলতে পারেনি। তাই এই মহাঘাতক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি।

তবে জীবাস্ম গবেষণা আরও উন্নত ও আরও বিস্তৃত হয়ে ওঠার পর পোলিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওবায়োলজির গবেষক দল আবার গবেষণা শুরু করেন।

তাঁরা হিসাব কষে দেখেন জীবাস্মের এই লরাইনোসরাসটি ২০ ফুটের মতো লম্বা ছিল।
কিন্তু স্বপ্রজাতির অন্যদের চেয়ে এদের আকার বেশ ছোটো।

                       আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীতের হাঁটার চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার

কারণ বিজ্ঞানীদের ধারণা, লরাইনোসরাসের স্বাভাবিক আকার ৫০ ফুট। সম্ভবত জুরাসিক যুগের শেষ দিকে শারিরিক কাঠামো খর্ব হতে থাকে এদের, অন্যান্য শিকারি প্রাণীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। এর ফলেই হয়তো এরা বিলুপ্ত হয়।

এই জীবাস্ম সম্পর্কে গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য মাদজিয়া বলেন,‘প্রাণী-বিবর্তন গবেষণায় এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি আমরা, এ ধরনের ফসিল বিবর্তনের ধারা বুঝতে অনেকটাই সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলেও জানান তিনি।

তথ্যসূত্র: লাইভসায়েন্স