কোনো একটা দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। শুধু বাংলাদেশেই উৎপাদিত হয় এমন ১১টি পণ্য ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ থেকে এই স্বীকৃতি পায়।
সম্প্রতি জিআই পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ৭টি পণ্য। এগুলো হচ্ছে ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গল, শীতল পাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা ও ল্যাংড়া জাতের আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, শেরপুরের তুলসীমালা ধান এবং বগুড়ার দই।
এ নিয়ে দেশে জিআই মর্যাদা পাওয়া মোট পণ্য হচ্ছে ১৮টি। ২০১৬ সালে দেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর একে একে পেয়েছে ইলিশ মাছ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন শাড়ি।
এরপর বাগদা চিংড়ি, ফজলি আম, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল স্বীকৃতি পায়।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।
এ জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠনকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটির কাছে আবেদন করতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রারের অনুমোদন পেলে জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
এরপরে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। গেজেটের দুই মাসের মধ্যে কেউ যদি এই পণ্য নিয়ে আপত্তি না তোলে তাহলে সনদ দেওয়া হয়। তারপর চূড়ান্তভাবে কেবল দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
নতুন ৭ পণ্যের আবেদনকারী:
বগুড়ার দইয়ের জন্য বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, শীতলপাটির জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), তুলসীমালা ধানের জন্য আবেদন করে শেরপুরের জেলা প্রশাসক।
এছাড়া ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নাটোরের কাঁচাগোল্লার জন্য নাটোর জেলা প্রশাসক, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর আবেদন করেছে।
জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সুবিধা হয়। দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হয়। পণ্যের মৌলিকত্ব বা সত্ত্বার একমাত্র দাবিদার ঘোষণা মিলে, পাশাপাশি রপ্তানিতেও বড় সুবিধা পাওয়া যায়।
বলে রাখা ভালো, সরকার ২০১৩ সালে জিআই সনদ আইন পাস করে। আর বিধিমালা প্রকাশ করে ২০১৫ সালে। এই বিধিমালার সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে জিআই সনদ দেয় ডিপিডিটি।