প্রায় ৫ বছর বন্ধ থাকার পর লন্ডনে আবারো ফিরেছে সিগনেচার সাউন্ড। মেরামতের পর চালু করা হয়েছে বিগ বেন। ফলে বড়দিনের দিন বিশাল এই ঘণ্টা ধ্বনী শুনতে পাবে লন্ডনবাসী। ১৩.৭ টন ওজনের বিশ্ব বিখ্যাত এই ঘড়ির শব্দ বুকে বেজে উঠেছে।
২০১৭ সাল থেকে বন্ধ ছিল বিগ বেন। চালু হওয়ার পরে পার্লামেন্ট সদস্য ও স্টাফরা জড়ো হন বিগ বেনের সামনে। কেউ কেউ আবার আবেগে আপ্লুত হয়ে অঝোড়ে কাদতে থাকেন। গত ১১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষমূলকভাবে ১৫ মিনিট করে চালু করা হয়।
বিশ্ববিখ্যাত এই ঘড়িটিকে সবচেয়ে মিস করেছেন ব্রিটেনের এমপিরা কারণ পার্লামেন্টে হাউসে বসেই এই ঘড়ির টাইম দেখে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তারা। তবে বিগ বেন আবার চালু হওয়ায় খুশি তারা।
৬০ জন ইঞ্জিনিয়ার প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিগ বেনটি পুনরায় সচল করতে হয়েছে। বিগ বেনের শব্দে মুখরিত হচ্ছে লন্ডন শহর। গত দেড় শ বছর ধরেই এই দৃশ্য চলমান ছিল যা বিগত ৫ বছর দেখা যায়নি। ১৫ মাইল বা ২৪ কিলোমিটার দূর থেকেও রাতে বিগ বেনের শব্দ শোনা যায়। বিগ বেনের শব্দ এতোই বিকট যে পার্লামেন্ট স্কয়ারের সব দিক থেকেই শোনা যায়।
১৫৭ বছরের ইতিহাসে এর আগে কখনোও এত লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ থাকেনি বিগ বেন। এই পাঁচ বছর মেরামত চলাকালে বিশেষ কয়েকটি দিন বাজানো হয়েছে টাওয়ার ক্লকের ঘণ্টা। গত সেপ্টেম্বরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণের পর বাজানো হয়েছিল এই ঘণ্টা।
এছাড়াও নববর্ষের দিনগুলোতেও বাজানো হয়েছে বিগ বেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৯৬ মিটার লম্বা এলিজাবেথ টাওয়ারের এই ঘড়ির ১৯৮৫ সালের পর থেকে কোনও মেরামত হয়নি। ডায়ালের কাঁচ, ঘড়ির কাঁটা ও টাওয়ার সব কিছুই মেরামত করা হয়েছে। এছাড়াও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ান থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে আসার পরও বেজেছিল এই ঘড়ির ঘণ্টা।
১৮৪০-এ তৈরি হয়েছিল লন্ডন টাওয়ার। পরবর্তীকালে ২০১২ সালে এই টাওয়ারের নতুন নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর বাজানো হত বিগ বেন। ১৯১৮ সালের এই দিন থেকে বন্ধ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউসের উপর এই টাওয়ার ঘড়ির ঘণ্টা দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডন শহরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। মাঝে এই টাওয়ার ক্লকের ঘণ্টাটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তা বাজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এর পরই ওই ঘণ্টাটি সারিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ওই টাওয়ার ক্লকের ঘণ্টাটিকে পুরোপুরি সারিয়ে ফেলায় ১১ নভেম্বর থেকে তার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন আপামর ব্রিটেনবাসী। টাওয়ার ক্লকের ঘণ্টাটি মেরামম করতে গিয়ে তার প্রায় হাজারের মতো পার্টস ফের নতুন করে ওই ঘড়িতে বসানো হয়েছে। যদিও তাতে ঘড়ির বাহ্যিক আকারের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।
২০১৭ সালে লন্ডন টাওয়ার ঘড়ির ঘণ্টা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় খবরটি সামনে আসতেই বহু মানুষ টাওয়ারের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী ‘বিগ বেন’ শব্দ করা বন্ধ করে দেওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অনেক ব্রিটেনবাসী। তখনই এই ঘণ্টাকে আবার সচল করে তোলার দাবি ওঠে।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর টাওয়ার ক্লক এবং বিগ বেন পরীক্ষা করেছিলেন ইঞ্জিনিয়াররা। ওই সময় মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য ফের বেজে উঠেছিল বিগ বেন। তবে তার পর থেকে আর বাজেনি ওই ঘড়ি।
উল্লেখ্য, বিগ বেন (ইংরেজি: Big Ben) লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকার সংসদ ভবনের উত্তরাংশের ক্লক টাওয়ারে অবস্থিত সুবিশাল ঘণ্টার ডাক নাম। যা সময়ে সময়ে বেজে উঠে। আনুষ্ঠানিকভাবে টাওয়ারটি ক্লক টাওয়ার কিংবা প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টার নামে পরিচিত। লন্ডনের নাগরিকদের অধিকাংশই টাওয়ারটিকে বিগ বেন নামে শখ করে ডেকে থাকেন। আরব নিউজ ও