সমুদ্র সৈকতের রেষ্টুরেন্টগুলোতে বাহারি সী ফুড খাবারের অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই থাকে। তবে পানির নিচের রেষ্টুরেন্টে খাবারের অন্য রকম অনুভূতি পাওয়া যায় মালদ্বীপে, যা বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশে দেখা যায়।
পর্যটনের স্বর্গরাজ্য মালদ্বীপে পানির নিচের রেষ্টুরেন্টে বসে খাবার খেতে খেতে চারপাশে জলজ প্রাণী, ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ও কোরাল ভেসে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা।
মালদ্বীপের ৫টি সেরা আন্ডারওয়াটার রেষ্টুরেন্টের বিষয়ে বিস্তারিত জানবো এই নিবন্ধে।
ইথা আন্ডার সী রেষ্টুরেন্ট:
মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো ইথা আন্ডার সী রেষ্টুরেন্ট, যা সমুদ্রের ৬ মিটার গভীরে স্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে তৈরি।
এ রেষ্টুরেন্টে একসাথে ১২ জন বসা যায়। সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন মাছ চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত এখানে খাওয়া যায়। এখানে দুপুরের খাবার খেতে গুণতে হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা আর ডিনারের জন্য জন প্রতি গুণতে হয় ৩০ হাজার টাকা।
দুই খাবারের সাথেই থাকে এক গ্লাস শ্যাম্পেন। এটির অবস্থান মালদ্বীপের রাঙ্গালি আইল্যান্ডের কনরাডে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবারের সাথে জলজ প্রাণিদের আনাগোনা দেখতে প্রতিদিন বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।
সাবসিক্স রেষ্টুরেন্ট:
মালদ্বীপে পানির নিচের এক অদ্ভুদ রেষ্টুরেন্টের নাম সাবসিক্স রেষ্টুরেন্ট। এটি পানির মাঝে এমন এক জায়গায় তৈরি করা হয়েছে যেখানে বসে আশপাশে প্রচুর পরিমাণে প্রবাল আর সামুদ্রিক প্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।
মেঝে থেকে যেদিকেই চোখ যায় সবখানেই নানা জীবন্ত প্রাণী দেখা যায়। এর মধ্যে প্যারট ফিশ, মুরিশ আইডলস, মোরি ইলস, জায়ান্ট গ্রুপারস, বাটারফ্লাই ফিশ, ড্যামসেল ফিশ, হকসবিল কচ্ছপ অন্যতম।
২০ ফুট পানির নিচের এই রেষ্টুরেন্টে এক বেলা খাবারে খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। প্রতিদিন দুপুর ১২ থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দুপুরের খাবার আর রাত ৯ টার পর রাতের খাবার শুরু হয়।
প্রতি বুধবার ও শনিবার আন্ডার ওয়াটার গ্লো পার্টির আয়োজন থাকে এই রেষ্টুরেন্টে। মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে ৪০ মিনিট বিমান দূরত্বে নিয়ামা দ্বীপে এর অবস্থান।
সী রেষ্টুরেন্ট:
মালদ্বীপে পানির নিচে খাবারের অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে সী রেষ্টুরেন্ট। খাবার খেতে খেতে বিভিন্ন জললপ্রাণীর সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখা যায় এই রেষ্টুরেন্টে বসে।
প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে নিজের চোখ দিয়ে পানির নিচের জীবন উপভোগ করার একটি অসাধারণ স্থান এটি।
বেলা ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত দুপুরের খাবার আর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ডিনার টাইম।
প্রতিবার খাবারের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা গুণতে হয়। পানির নিচে বিশ্বের প্রথম বারটি এই রেষ্টুরেন্টেই রয়েছে। মালদ্বীপের কিভাহ হুরাভালহি দ্বীপে এটির অবস্থান।
৫.৮ আন্ডার সী রেস্টুরেন্ট:
মালদ্বীপে পানির নিচের আরেক অদ্ভুদ রেষ্টুরেন্টের নাম ৫.৮ আন্ডার সী রেষ্টুরেন্ট। ঠান্ডা পরিবেশ, চারপাশে অসংখ্য মাছের ছড়াছড়ি, সামনে পছন্দসই খাবার, জুস, হাতে বই রাখার সব আয়োজন আছে এখানে।
নানা রঙের মাছ, হাঙর, অক্টোপাসের চলাফেরা শিহরণ জাগায়। পানি থেকে এর অবস্থান ৫.৮ মিটার নিচে বলে এর নাম ৫.৮ আন্ডার সী ।
রেষ্টুরেন্টটিকে দশটি টেবিল রয়েছে। প্রতিটি টেবিল থেকেই পানির নিচের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। টেবিলে বসে সামুদ্রিক প্রাণিদের দেখা পাওয়া যায় খুব কাছ থেকে।
খাবার পরিবেশনের আয়োজনগুলো আরও মজার। এখানে পরিবেশিত প্লেট, বাটিগুলোর আদলও সামুদ্রিক প্রবালের মতো। খাওয়ার সময় মনে হবে একটি বড় শামুকে করে খাবার খাচ্ছেন।
প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে লাঞ্চ আর সোয়া ৬ টা থেকে সানসেট ডিনার শুরু হয়। সোয়া ৯ টার পর শুরু হয় মুনলাইট ডিনার।
রাত এবং দুপুরের খাবারের মেন্যুতে সাতটি করে খাবার পাওয়া যায়। এটির অবস্থান মালদ্বীপের হুরাওয়াহি দ্বীপে।
মাইনাস সিক্স মিটার রেস্টুরেন্ট:
মনোরম পরিবেশে সাগর জীবনের প্রকৃত স্বাদ নিতে মাইনাস সিক্স মিটার রেষ্টুরেন্টের তুলনা নেই। এই রেষ্টুরেন্টের সী ফুড পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
নীল জলরাশির ২০ ফুট নীচে গিয়ে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে দেখার জন্য সবচেয়ে রোমান্টিক স্থান এটি।
দুপুরের খাবার ছাড়াও শ্যাম্পেনসহ নাস্তা করার ব্যবস্থা আছে এই আন্ডারওয়াটার রেষ্টুরেন্টে।
এই রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবারের জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা আর ডিনারের জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
এছাড়া সন্ধ্যায় কচ্ছপ, সীল ও তিমিসহ নানান প্রাণীর থিম ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
দুপুর ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা চলে মধ্যাহ্নভোজ আর সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চলে ডিনার। মালদ্বীপের মাধো আইল্যান্ডে নয়নাভিরাম এই রেষ্টুরেন্টে এটির অবস্থান।