বিজ্ঞানের গবেষণার সুবাদে অজানা নানান বিষয়ে সামনে আসছে। সাগরের গভীর থেকে উচু পর্বতের অজানা এমন সব তথ্য কখনো কখনো মানব জাতিকে অবাক করে দেয়।
মহাবিশ্বের সূচনা লগ্নে সময়ের ওপর গতির অদ্ভুত প্রভাবের কারণে সময় নাকি ধীরগতিতে অতিবাহিত হতো, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর দূরে থাকা আলোর গতিপথ সেই ধারণাই আমাদের কাছে তুলে ধরে। একে বলা হয় টাইম ডিলেশন।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জেরান্ট লুইস ও অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ ব্রেন্ডন ব্রুয়ার মহাজাগতিক যুগে কোয়াসার গ্যালাক্সি নামক উজ্জ্বল ছায়াপথগুলি অধ্যয়ন করে প্রথমবারের মতো মহাবিশ্বে এটি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
শুধু তাই নয় মহাবিশ্বের আদি লগ্নে সময় নাকি পাঁচগুণ ধীর গতিতে চলে। এটি দেখায় যে কোয়াসারগুলো ছায়াপথগুলো স্থান-কালের প্রভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার অর্থ তারা কেবল সৃষ্টি তত্ত্বের আদর্শ মডেলের সাথে একমত নয়, তারা সময়ের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লুইস ব্যাখ্যা করেছেন -”যখন মহাবিশ্বের বয়স মাত্র এক বিলিয়ন বছরেরও বেশি ছিল, তখন সময়ের দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে সময় পাঁচ গুণ ধীর গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে।
আপনি যদি সেখানে থাকতেন, তখন এক সেকেন্ডকে এক সেকেন্ডের মতো মনে হবে- কিন্তু আমাদের অবস্থান থেকে, ভবিষ্যতে ১২ বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে, সেই প্রারম্ভিক সময়টি প্রবাহিত হবে।”
যদিও এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সত্যিই লক্ষণীয় নয়, মহাবিশ্বের স্থান এবং সময় অবিচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত। এইভাবে আমরা মহাবিশ্বের ত্বরান্বিত সম্প্রসারণ দেখতে পাই। অনেক দূর থেকে আলো স্থান প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে তার দৈর্ঘ প্রসারিত হয়। যেমন লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ সবথেকে বেশি।
এই প্রভাবটিকে ডপলার প্রভাব বলা হয় এবং এটি পৃথিবীতেও অনুভব করা যেতে পারে। অ্যাম্বুলেন্সে আমরা এর ব্যবহার দেখি। অ্যাম্বুলেন্সকে উদাহরণ হিসেবে দেখলে এটিকে গ্যালাক্সি হিসেবে চিন্তা করুন এবং আলোটি সাইরেন। উৎসে নির্গমন স্বাভাবিক, কিন্তু আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সমস্ত দিকে প্রসারিত হয়ে যায়।
মহাবিশ্বের অর্ধেক পথ জুড়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। সময় স্বাভাবিক নিয়মে চলে। সুপারনোভা বিস্ফোরণের কাছাকাছি থাকা কারো কাছে, সময়ও স্বাভাবিকভাবে কেটে যাবে বলে মনে হবে।
কিন্তু দুটি বিন্দুর মধ্যে আপেক্ষিক বেগের কারণে, সুপারনোভা আমাদের কাছে ধীর গতিতে ঘটতে দেখা যায়। এটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে প্রারম্ভিক মহাবিশ্বের কোয়াসারগুলো একই রকম প্রভাব দেখাবে, তবে তারা সুপারনোভা থেকে বিভিন্ন ধরণের বস্তু।
কোয়াসার গ্যালাক্সিগুর কেন্দ্রে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে। ব্ল্যাক হোলের চারপাশের উপাদান উত্তপ্ত হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে আলো তৈরি করে, সেগুলো ঝিকমিক করে।
লুইস ও ব্রুয়ার ২.৪৫ থেকে ১২.১৭ বিলিয়ন বছর আগে ১৯০ টি কোয়াসারের একটি নমুনা অধ্যয়ন করেছিলেন, দুই দশকের একটি সময়কাল ধরে নেওয়া বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ডেটা সহ। প্রতিটি কোয়াসারের জন্য তাদের প্রায় ২০০টি পর্যবেক্ষণ ছিল।
আগে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে কোয়াসার পরিবর্তনশীলতা সময়ের প্রসারণের প্রভাব দেখায় না, তবে নমুনাগুলো ছোট ছিল ও অনেক কম সময়ের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
কোয়াসারের সংখ্যা ও পর্যবেক্ষণের সময়কাল উভয়ই নাটকীয়ভাবে প্রসারিত হয়েছে, দুই গবেষক দেখতে পান যে তারা সাম্প্রতিক কোয়াসারের তুলনায় ধীর গতিতে ঝিকমিক করছে।
লুইস বলেছেন- “প্রাথমিক অধ্যয়নগুলো মানুষের মনে প্রশ্ন তুলে দেয় যে যদি স্থান সম্প্রসারণের ধারণাটি সঠিক হয় তাহলে কোয়াসারগুলো সত্যিই মহাজাগতিক বস্তু?
নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোয়াসারগুলোর অধরা চরিত্র সামনে এসেছে এবং তারা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে আচরণ করে।”
গবেষণাটি নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশের পর অনেকে তাজ্জব বনে গেছেন।
তথ্যসূত্র: নেচার অ্যাস্ট্রোনমি ও সায়েন্স এলার্ট