মঙ্গল গ্রহে স্বর্ণের খনির সন্ধান

মঙ্গল গ্রহে বৈজ্ঞানিক সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করছে নাসার মহাকাশ যান পার্সিভারেন্স রোভার। মঙ্গলে পাঠানো এই যানটি পাথরসহ বিভিন্ন ধরণের উপাদান আবিষ্কার করেছে, যা মঙ্গলের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের তথ্য দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা শেষে এবার মঙ্গল গ্রহে সোনার খনির খবর দিয়েছে মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থাটি। নাসার রোভার পাথরের যে ছবি মঙ্গলের মাটি থেকে পাঠাচ্ছে সেগুলোর মধ্যেই স্বর্ণের খনি রয়েছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

গত ৪ মাস ধরে মঙ্গলের মাটিতে রোভার ঘুরছে। এ সময় মঙ্গল থেকে সাতটি পাথরের ছবি পাঠায় রোভার। তার মধ্যে একটি পাথরের রং একেবারে আলাদা। মঙ্গলে ঘুরার সময় রোভারটির চাকা একটি পাথরে আটকে যায়। সেই পাথরের ছবি তুলে পাঠানোর পরই নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এটি একটি সোনার পাথর।

মঙ্গলে ঘুরে রেড়াচ্ছে নাসার যান পার্সিভারেন্স রোভার, ছবি: স্পেস ডটকম

পৃথিবীর মতো মঙ্গল কোনও এক সময়ে আগ্নেয়পিন্ড ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে শীতল হয়েছে। মঙ্গল থেকে পানি হারিয়ে গেছে বহু বছর আগে। তবে শুকনো মঙ্গলের মাটি থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে বেরিয়ে এসেছে এই সোনার রং।

যদি মঙ্গলে সোনার খনির দেখা মেলে তাহলে সেখান থেকে নতুন আরও সম্পদের সন্ধান মিলতে পারে। যেখানে সোনার খনি থাকে সেখানে অন্য রত্নও থাকতে পারে। এই ধরণের পাথর মঙ্গলে পানি থাকার প্রমাণ করে। তবে সেই পানি গ্যাসের আকারে রয়েছে। সেই থেকেই মঙ্গলে প্রাণির বসবাস ছিল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে মঙ্গলের বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে এখানে প্রাণ থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গল গ্রহে দিন ও রাতে তাপমাত্রার যে পার্থক্য তাতে কোনো প্রাণির পক্ষেই মঙ্গলে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

নাসার রোভারে সোনার রঙের পাথরের নমুনা , ছবি: জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি

এই সোনার রঙের পাথরের নমুনা নাসার রোভারেই রয়েছে। যদি রোভারকে ফিরিয়ে আনা হয় তাহলে সেখান থেকে হয়তো অনেক কিছু জানা যাবে। তবে কবে নাগাদ রোভার পৃথিবীতে ফিরবে তা নিয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। মনে করা হচ্ছে ২০৪০ সালে হয়তো রোভার পৃথিবীতে ফিরবে। তার আগে এসব রহস্য থেকে যাবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে নাসার পার্সিভারেন্স রোভার মঙ্গলে যাওয়ার পর থেকেই সাতটি বিশেষ পাথরের ছবি পাঠিয়েছে। এর আগে গত চার বছরে নাসার বিভিন্ন মহাকাশ যান ৮৩টি বস্তু পাঠায় মঙ্গলের মাটি থেকে।

তবে নাসার জিপ গাড়ি সাইজের পার্সিভারেন্স রোভার বর্তমানে মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারের প্রান্ত বরাবর পাহাড়, পাথর ও পাথুরে অংশ অন্বেষণ করছে। জেজেরো হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখার উত্তরে একটি শুষ্ক বাটি আকৃতির নিম্নাঞ্চল, যা কোটি কোটি বছর আগে একটি হ্রদ ছিল বলে ধারণা নাসা গবেষকদের।

চার মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মঙ্গল যান রোভার, ছবি: স্পেস ডটকম

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে পার্সিভারেন্সের প্রকল্প বিজ্ঞানী কেটি মরগান এক বিবৃতি জানান, জেজেরোতে অতীতের বিজ্ঞান অভিযানের সময় এমন একটি শিলা খুঁজে পেতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগতো। কিন্তু এখানে গর্তের কাছে রোভার যান নতুন ও আকর্ষণীয় পাথর দেখা যায়। আমরা যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে আরও বেশি কিছু দিচ্ছে এই নতুন রোভার।

বিজ্ঞানীরা পার্সিভারেন্সের সংগ্রহ করা এই নমুনাগুলো ও অন্যান্য নমুনা পৃথিবীতে ফেরত পাঠালে নিশ্চিত হওয়া যাবে মঙ্গলগ্রহে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা। তবে পৃথিবীতে নমুনা পাঠানো অত্যন্ত জটিল ও প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং। কারণ এই প্রচেষ্টায় রয়েছে বাজেট, সময়সূচি ও প্রকৌশলগত বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা। এসব বিবেচনায় নাসার মার্স স্যাম্পল রিটার্ন মিশনের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত।

পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ব্যয় হবে আনুমানিক ১১ বিলিয়ন ডলার আর নমুনা ফেরত আসার সময়সীমা ২০৪০ সাল। তবে আশার কথা হচ্ছে নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর জন্য আরও সাশ্রয়ী মূল্যের ও দ্রুত আনার উপায় খুঁজে বের করার জন্য শিল্প ও শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে নতুন প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া বা সংশোধিত কৌশল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত আসতেও ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় লাগবে বলে জানিয়েছে নাসা।

সূত্র: স্পেস ডটকম ও বিজনেস টুডে