বন্যপ্রাণিদের অত্যচারে অতিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার কৃষকরা। বানর, ময়ূর, দৈত্যাকার কাঠবিড়ালি, শজারু ও বন্য শুকরের মতো প্রাণিরা জমির ফসল, বাগানের ফলমূল ও ফুল ফলাদি নষ্ট করে দিচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ে যাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রির কৃষি খাত।
দেশটির সরকারি তথ্য বিবরণ অনুযায়ী, মোট অর্থনীতির ৮ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। এ খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৯০ লাখ মানুষের। কৃষি ফসল রক্ষার্থে এবার ফসল নষ্টকারী বন্যপ্রাণি গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।

শ্রীলঙ্কার রপ্তানি উন্নয়ন বোর্ড’র (ইডিবি) তথ্য বলছে, নারিকেল জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বের চতুর্থ। এ ছাড়া দেশটির কৃষকরা বছরে ৩০০ কোটি কাজুসহ অন্য বাদাম উৎপাদন করে।
এ ব্যাপারে সরকারি একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বানর, ময়ূর ও দৈত্যাকার কাঠবিড়ালির কারণে শাব-সবজি, ফল-মূল ও ফুল-ফলাদির পাশাপাশি নারিকেল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে দেশে।
দেশটির কৃষি ও প্রাণিসম্পদ উপমন্ত্রী নমল করুনারত্নে জানান, এই সমস্যা দিনদিন তীব্র হচ্ছে। এসব প্রাণিদের ফসল ধ্বংস করার কারণে বহু কৃষক চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন। মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছর ৯ কোটি নারিকেল নষ্ট করে এসব বণ্যপ্রাণি।

কৃষিক্ষেত্রে এই প্রাণিদের ঘনত্ব বোঝার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে তাদের গণনা করা। এদের সংখ্যা জানা থাকলে তাদের পরিচালনার জন্য সঠিক নীতিমালা তৈরি করা সহজ হবে। প্রায় ৪০ হাজার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি এসব প্রাণি গণনার কাজে যুক্ত হয়েছে বলে জানান প্রাণি সম্পদ উপমন্ত্রী।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানী কলম্বোর দক্ষিণে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হানা দেয় একটি বানর। এতে পুরো দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা যায়। এক বানরের কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে তিনদিন অন্ধকারে থাকে শ্রীলঙ্কা। এক বানরের ‘হানায়’ পুরো দেশে বিদ্যুৎবিপর্যয় হয়েছিল। এরপরই বানরের সংখ্যা গণনার বিষয়টি সরকারের নজরে আসে।
এদিরিসিংহে আরাচ্চিলগে জ্ঞানসেন নামের ৭২ বছর বয়সী এক কৃষক জানান, গণনার জন্য নির্ধারিত পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৪৫টি বানর, ছয়টি দৈত্যাকার কাঠবিড়ালি ও নয়টি ময়ূর গণনা করেছেন তিনি। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর ডাম্বুলায় আট একর কৃষিজমি বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জ্ঞানসেনের।

কাঁধে একটি এয়ারগান ও একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে সীসার গুলি নিয়ে যত্ন সহকারে বাগানে জন্মানো নারকেল, আম ও কলা গাছের সারি ঘুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টার পাহারা দেন জ্ঞানসেন।
কিন্তু বানরের এক ধরনের প্রজাতি এখনও গাছ থেকে শত শত নারকেল ও আম তুলে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ময়ূররা ফসলের নানান বীজ খেয়ে ফেলে। বানররা এয়ার গানের শব্দে অভ্যস্ত, তাই তাদের ভয় দেখানোর জন্য আতশবাজি করেন এই কৃষক। সাময়িক সময়ের জন্য ভয় পেলেও কিছু সময় পরে এরা আবার ফিরে আসে বলেও জানান কৃষক জ্ঞানসেন।

ফসলি জমিতে বানর, ময়ূর, শজারু ও বন্য শুকরের মতো প্রাণিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার জন্য এদের আবাসস্থল ধ্বংসকে দায়ী করছেন কৃষকরা। এটা প্রাণিদের দোষ নয়, মানুষের দোষ। তবে গণনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ বের হবে বলে আশা প্রকাশ করেন দেশটির কৃষকরা।
সূত্র: জিও টিভি, রয়টার্স, মানি কন্ট্রোল ও ইকোনমিক্স টাইমস