যে সম্পর্ক থাকে সব বাঁধনের ঊর্ধ্বে তা হলো বন্ধু। অর্থ দিয়ে কেনা যায় না বন্ধুত্ব,বা গায়ের জোরেও হয় না বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের জন্য চাই শুধু গুণ। বন্ধুত্বের বড় বিষয়টি হচ্ছে সুসম্পর্ক ধরে রাখা। বন্ধুর সঙ্গে চলাফেরা বা আচার-ব্যবহারে একটু এদিক-সেদিক হলেই সম্পর্কে ফাটল ধরে।
আসুন জেনে নিই একজন ভালো বন্ধুর কিছু উত্তম গুণ-
লজ্জায় না ফেলা:
বন্ধু তো বন্ধু। সে দেখতে কেমন, তা ভাবনা ঠিক নয়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভালো হলেও বন্ধুর গায়ের রং বা বর্ণ নিয়ে কখনো খোঁচা দিয়ে কথা বলতে নেই। বন্ধুকে খোঁচা মেরে কথা বলার চেয়ে প্রশংসা করবেন। তাতে সম্পর্ক আরও সুদূর হয়। প্রীতি আর সম্মান বন্ধুত্ব জোরালো করে।
উৎসাহ দেয়া:
বন্ধুকে ভালো কাজে যত পারেন উৎসাহ দিন। কখনো নিরুৎসাহিত করবেন না। বন্ধুর অনেক সময় সমর্থন, সাহায্য আর নির্দেশনার প্রয়োজন হতে পারে। বন্ধুর পাশে থাকুন। যদি বন্ধু অনৈতিক বা খারাপ দিকে যেতে থাকে, তবে তাকে বুঝিয়ে বলুন।
ভালো কাজে উৎসাহ দিন। বন্ধুর আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন। বন্ধুর শক্তিকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করুন। তবেই ভালো বন্ধু হতে পারবেন। তাতে আপনার প্রতি তার সম্মান কমবে না বৈকি বাড়বে।
গোপন কথা পোপনে রাখা:
বন্ধুর গোপন কথা অন্য কারও কাছে প্রকাশ করবেন না। তার দুর্বল জায়গায় খোঁচা দিয়ে কথা বলবেন না। বন্ধু হচ্ছে বিশ্বাস আর আস্থার স্থান। ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্বাস করে অনেক গোপন কথা বলতে পারে। কাউকে যেন বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় পুড়তে না হয়। সব বন্ধুকেই এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
সুসময়ের বন্ধু না হওয়া:
”সুসময়ে অনেকই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারও নয়’ এই জনশ্রুতি মাথায় রাখতে হবে। আপনার বেলায় যেন তা না ঘটে। যদি সুসময়ে বা আপনার দরকারে বন্ধুকে কাছে টানেন, তবে এই মধুর সম্পর্কের প্রতি আপনি অবিচার করবেন।
বিপদে বন্ধুর পাশে থাকুন। একসঙ্গে হাসুন, একসঙ্গে বেদনা ভাগাভাগি করুন। তাতে সম্পর্ক আরও মধুর হবে। বিপদের মধ্যে পাশে থাকাই প্রকৃত বন্ধুত্ব। কথায় আছে না বিপদেই বন্ধুর পরিচয়।
অর্থই অনর্থের মূল:
কথায় বলে, কাছের বন্ধুকে টাকা ধার দিতে নেই, তাহলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে যদি অর্থের বিষয় যুক্ত থাকে, মনোমালিন্য তৈরি হতে পারে। বন্ধুত্বের মধ্যে যেন বিব্রত ও অস্বস্তিকর অবস্থা চলে না আসে সে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।
বন্ধুর যদি আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকে, তবে তাকে স্বনির্ভর হতে বা ঘুরে দাঁড়াতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। তবে একান্তই বিপদ হলে কাছের বন্ধু হলে তো জানার কথা। এক্ষেত্রে ধার বা সহযোগিতা যে কোনভাবেই বিপদে বন্ধুর পাশে থাকে।
প্রতি মুহূর্তের স্বতঃস্ফুর্ততা:
দু’জন মানুষকে পাশাপাশি রেখে বন্ধু হতে বললে বন্ধুত্ব হয় না। প্রেমের মতোই বন্ধুত্বও সাবলীল এবং স্বতঃস্ফুর্ত। ফলে প্রিয় বন্ধুরা কখনওই একসঙ্গে চুপচাপ থাকে না। তারা প্রাণবন্ত এবং উচ্ছল থাকে। যদি কথাই বলতে ইচ্ছা না করে তাহলে সেই বন্ধুত্ব না করাই ভালো। জোর করে অন্তত বন্ধুত্ব হয় না ৷
বন্ধুত্ব চিরকালের:
প্রিয় বন্ধু চিরদিনের। হতে পারে দু’জনে আলাদা কলেজ গিয়েছেন, আলাদা শহরে জীবন-যাপন করেন, প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কিন্তু এত কিছুর পরও ভালো বন্ধুত্ব কখনোই হারিয়ে যায় না। দুজন ভালো বন্ধু কখনোই একে অপরকে ভুলে যাবে না।
বরং আরো বেশি করে একে অপরকে মনে করবে এবং সময় পেলেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে খুনসুটি করবে, এমনই হতে হবে বন্ধুত্ব। রাগ অভিমান করে পরস্পরকে ভুলে গেলে সেটা কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়। যেকোনো উপায়ে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকা এবং মনের ভাব আদান-প্রদান করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখতে হয়।
সংকলন: জিনিউজ, ব্রেইনী কোট্স, উইকিহাউ ও লাইফ অপটিমাইজার।