এমিনি এরদোগান

প্রভাবশালী ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান

জাতিসংঘের ‘ওয়েস্ট ওয়াইজ সিটিজ গ্লোবাল চাম্পিয়ন’ পুরস্কার জয় করেছেন। সুস্থ পরিবেশ গড়ার প্রচেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘের সংস্থাটি (ইউএন হ্যাবিট্যাট) তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানব বসতি কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইমুনাহ মোহাম্মদ শরীফ তার হাতে ২০২১ সালের এই পুরস্কার তুলে দেন। বিশ্ব বর্জ্য সংকট মোকাবেলায় নেওয়া এই উদ্যোগে ইতোমধ্যে বিশ্বের ২০০টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

তুরস্কের ফার্স্ট লেডির অনুপ্রেরণাদায়ী উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের জন্য এমিনি এরদোগানকে ধন্যবাদ প্রদান করে জাতিসংঘ।

এমিনি এরদোয়ান ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। নাম এমিনি গালবারেন, এছাড়া তিনি আমিনা এরদোগান নামেও পরিচিত। তিনি তুরস্কের ফাস্ট লেডি ও তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের স্ত্রী। তিনিও জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টির একজন সক্রিয় কর্মী ও নারী মুখপাত্র।

এমিনি ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তানবুলের ইউকাদারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরব বংশোদ্ভূত, তার পরিবার তুরস্কের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সিরত প্রদেশ থেকে ইস্তানবুলে এসেছিল।

এমিনি পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তিনি মিহাত পাশা আকসাম আর্ট স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও স্নাতক সম্পন্ন করার আগেই এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গিয়েছিলেন। এমিনি আইডিলিস্ট উইমেনস এসোসিয়েশনে যোগ দিয়েছিলেন। এ সংগঠনের সদস্য থাকাকালীন সময়ে একটি সম্মেলনে রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সাথে সাক্ষাৎ হয়।

রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও এমিনি গালবারেন ১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তার স্বামী এরদোয়ান তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতি। ২০১৪ সাল থেকে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

২০০১ সালে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি (একেপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এরদোয়ান। দলটি প্রতিষ্ঠার অল্প কদিনের মধ্যেই জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে। ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের মতো তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে এবং ২০০২, ২০০৭, ২০১১,২০১৪ সালে পরপর চারবার সাংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়।

এমিনি এরদোগান 02
ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন এই দলের সভাপতি ও প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রী এবং তার আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়াও ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের এবং ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সির্তের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৮ সালে এমিনি গালবারেনকে বিয়ে করেন এরদোয়ান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকারের চুক্তি, বিগত দশ বছর ধরে চলামান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তুর্কি লিরারের (তুর্কি মুদ্রা) মূল্য পুনর্নিধারণ, সুদের হার কমানো, অতীতে অট্টোমান শাসনাধীন দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিশ্বমহলে নেতৃস্থানীয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তিকে মূল লক্ষ্য রেখে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ, বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কারণে বিশ্বমহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত তুরস্কের এই রাষ্ট্র প্রধান। গালবারেন-এরদোয়ান দম্পতির ঘরে রয়েছে চার ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের নাম- আহমেত বুরান এরদোয়ান, সামিয়ে এরদোয়ান, নেকমিতিন বিলাল এরদোয়ান ও এশরা এরদোয়ান।

এমিনি ২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নারী নির্বাচিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটউট অব পিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আইএনএসপিএডি) বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সংস্থাটি তাদের এ তালিকায় রেখেছে। এমিনি তাদের মধ্যে একজন। বেলজিয়াম ও পাকিস্তানে সংস্থাটির সদর দফতর রয়েছে। সমাজে উন্নয়নমূলক বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, সাংস্কৃতি, পরিবেশ এবং সামাজিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন কাজ করে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন এমিনি।

সম্প্রতি গাম্বিয়ায় একটি মসজিদের নতুন সংস্করণের উদ্বোধন করেছেন তিনি। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকটি সংস্থার সাথেও যুক্ত আছেন এমিনি।

মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত নেতা এই দম্পতি। বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের যে কোনো সমস্যায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার স্ত্রী এমিনি এরদোয়ান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে তারা সমান জনপ্রিয়। উম্মে হাফসা: