১০৬ বছর আগে শুরু হওয়া সাংবাদিকতার নোবেল খ্যাত এই পুরস্কার কারা পাচ্ছেন তা দেখা জন্য অপেক্ষায় থাকেন গোটা বিশ্বের সাংবাদিক ও সাহিত্যিকরা। বলছি পুলিৎজার পুরস্কার এর কথা।
যাত্রা শুরুর কথা:
পুলিৎজার পুরস্কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাপার সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সঙ্গীতের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে গোটা বিশ্বে সমাদৃত। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এর প্রশাসকের ভূমিকা পালন করে।
পুলিৎজার পুরস্কার এর প্রতিষ্ঠাতা:
জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্ট সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। সংবাদপত্র প্রকাশক পুলিৎজার নামের এই হাঙ্গেরীয়-মার্কিন সাংবাদিকই পুলিৎজার পুরস্কারের প্রচলন করেছিলেন।
১৯১১ সালের অক্টোবরে মৃত্যুর সময় পুলিৎজার নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেখে যান। তার অর্থের কিছু অংশ দিয়ে ১৯১২ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার স্কুল চালু হয়েছিল।
ওই বছর চালু হওয়ার কিছু বছর পর থেকে স্কলারশিপ দেওয়া হয় সাংবাদিকতার ওপর। জোসেফ পুলিৎজার এর রেখে যাওয়া অর্থের ২,৫০,০০০ (আড়াই লাখ) মার্কিন ডলার স্কলারশিপ দেয়া হয়, তা এখনো চলমান আছে।
প্রথম পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা:
এই অর্থের মাধ্যমে ১৯১৭ সালের ৪ জুন প্রথম পুলিৎজার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। মোট ২১টি ক্যাটাগরিতে এই পুরষ্কার দেয়া হয়। নতুন সংযুক্ত হয়েছে সাংবাদিকতারই জনসেবা বিভাগ।
মোট ক্যাটাগরি বা বিভাগ:
২১টি বিভাগে পুরস্কারটি দেয়া হয় তার মধ্যে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ১৪টি, সাহিত্যের ক্ষেত্রে ৬টি ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি পুরস্কার দেয়া হয়।
সাংবাদিকতার ১৪ ক্যাটাগরি:
১. পাবলিক সার্ভিস
২. ব্রেকিং নিউজ রিপোর্টিং
৩. তদন্তমূলক প্রতিবেদন
৪. ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন
৫. স্থানীয় প্রতিবেদন
৬. জাতীয় প্রতিবেদন
৭. আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন
৮. ফিচার রচনা
৯. ভাষ্য
১০. সমালোচনা
১১. সম্পাদকীয় রচনা
১২. সম্পাদকীয় কার্টুন নির্মাণ
১৩. ব্রেকিং নিউজ আলোকচিত্র
১৪. ফিচার আলোকচিত্র
সাহিত্যের ৬ ক্যাটাগরি:
১. কল্পকাহিনী
২. নাটক
৩. ইতিহাস
৪. জীবনী বা আত্মজীবনী
৪. কবিতা
৬. সাধারণ নন-ফিকশন
সঙ্গীতের ১ ক্যাটাগরি:
১. সঙ্গীত
পুরষ্কার হিসেবে যা দেয়া হয়:
২১ বিভাগের পুরস্কার বিজয়ীদের একটি করে প্রশংসাপত্র ও নগদ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬ লাখের বেশি।
বলে রাখা ভালো, ২০১৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার হিসেবে নগদ ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার করা হয়। বর্তমানে এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।
তবে ব্যতিক্রমী হচ্ছে জনসেবা ক্যাটাগরি। নতুন সংযুক্ত এই ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের প্রশংসাপত্রের পরিবর্তে স্বর্ণপদক দেয়া হয়। তবে এটি ২১টি ক্যাটাগরির মধ্যেই অর্ন্তভূক্ত।
আমেরিকার জাতীয় পর্যায়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ হিসেবে বিশ্বব্যাপি পরিচিত। ১৯১৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
সে হিসেবে পুলিৎজারের বয়স ১০৬ বছর। প্রতি বছর এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি বোর্ড প্রতি বছরই এই পুরস্কার ঘোষণা করে।
পুলিৎজার পুরস্কার ২০২৩:
প্রতিষ্ঠান হিসেবে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপি, সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আর লেখক হিসেবে বারবারা কিসংভার ও হার্নান ডিয়াজ ২০২৩ সালের সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে
৮ মে পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুরি বোর্ড। সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্য ও সঙ্গীতে অবদানের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিৎজার বোর্ড।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, পাবলিক সার্ভিস ও ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে দুটি পুরস্কার জিতেছে এপি। ইউক্রেন যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশন ও রাশিয়ার মারিওপোলের অবরোধের ছবি তোলার জন্য এপি এ দুটি পুরস্কার পেয়েছে।
অপরদিকে নিউইয়র্ক টাইমসকে ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ হত্যাকাণ্ডের সংবাদ কাভার করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টিং ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার জয় করে।
এর বাইরে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ক্যারোলিন কিচেনার ‘অবিচলিত প্রতিবেদনের’ কারণে এ বছর পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পর নারীরা যেসব ঝুট-ঝামেলার মধ্যে পড়েছিলেন যেসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন লিখে পুরস্কারটি পান ক্যারোলিন কিচেনার।
ক্যারোলিনের করা প্রতিবেদনে রয়েছে টেক্সাসের এক তরুণীর গল্প। যিনি গর্ভপাত করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর জমজ সন্তানের জন্ম দেন। যা আমেরিকাজুড়ে আলোচিত হয়।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বর্ণবাদী গোপন কথাবার্তা ফাঁস করার কৃতিত্বের জন্য সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে জনসেবা ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের ক্রিস্টিনা হাউসকে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর রাস্তায় বাস করার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরস্কার দেয়া হয়।
তাছাড়া ‘আত্মজীবনীমূলক বই’ ক্যাটাগরিতে জি-ম্যান বইয়ের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে লেখক ব্রেভারলি গেগকে।
এদিকে ফিকশন ক্যাটাগরিতে বারবারা কিংস্লোভার ‘ডেমন কপারহেড’ বইয়ের জন্য এবং হার্নান দিয়াজ ‘ট্রাস্ট’ বইয়ের জন্য পুলিৎজার জিতেন।
অন্যদিকে নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে ‘জর্জ ফ্লয়েড: ওয়ান ম্যানস লাইফ অ্যান্ড স্ট্রাগল ফর রেসিক্যাল জাস্টিস’ বইয়ের জন্য পুলিৎজার জিতেন রবার্ট স্যামুয়েলস ও তোলিউস ওলোরোনিপা।
নাটক ক্যাটাগরিতে সানাজ তোসির ‘ইংলিশ’ নামক নাটকটি পুলিৎজার পেয়েছে। আর ইতিহাস ক্যাটাগরিতে কোয়ি ফ্রিডমের ‘ডমিনিউন: এ সাগা অব হোয়াইট রেসিসটেন্ট টু ফেডারেল পাওয়ার’ বই এ বছর পুলিৎজার পেয়েছে।