ড্রাইভার সংকট, অটোমেটিক কার্গো করিডোরে যাচ্ছে জাপান। হা আপনি ঠিকই দেখছেন। কাজের চাপ ও দুর্ঘটনার মাত্রা কমাতে চলতি বছরের শুরুর দিকে নতুন একটি আইন করে জাপান সরকার। এতে চালকদের ওভারটাইম সীমাবদ্ধ করা হয়। আইনটি জাপানের সরকারি ও লজিস্টিকস খাতে ‘২০২৪ সমস্যা’ নামে কুখ্যাতি পেয়েছে। এই আইনের ফলে চালক সংকট আরও তীব্র হয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে জাপানের পরিবহন ক্ষমতা ৩৪ শতাংশ কমে যাবে বলে দেশটির সরকার ধারণা করছে। বর্তমানে দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ পরিবহন ক্ষমতা প্রায় ৪৩০ কোটি টন। যার মধ্যে ৯১ শতাংশের বেশি পণ্য ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।
ট্রাকচালকের তীব্র সংকট সমাধানে অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। রাজধানী টোকিও থেকে ওসাকার মধ্যে চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় কার্গো পরিবহন করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করছে জাপান। যা ‘কনভেয়ার বেল্ট রোড’ নামে পরিচিতি পাবে। প্রকল্পটির অর্থায়ন এখনও নির্ধারণ না হলেও ক্রমবর্ধমান সরবরাহ চাহিদা মোকাবেলায় একে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জাপান সরকারের করা গ্রাফিকস ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বড় আকারের চাকাযুক্ত বাক্স বা কার্গোর সারি তিন লেনের করিডোর দিয়ে চলাচল করছে, যা একটি বড় হাইওয়ের মাঝামাঝি ‘অটো ফ্লো রোড’ নামেও পরিচিত। ২০২৭ বা ২৮ সালের শুরুতে চালকবিহীন কার্গো পরিবহনের এ প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে থাকা জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব আনার প্রয়োজনেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চালক সংকট ও শ্রমের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি এ ব্যবস্থা কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করবে। ‘অটো ফ্লো রোডে’র মূল ধারণা হলো সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ২৪ ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয় ও চালকবিহীন পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করা।
পরিকল্পনা অনুসারে, জাপানে ফর্কলিফ্ট ব্যবহার করে বিমানবন্দর, রেলওয়ে ও বন্দরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে লোডিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা হবে। চাকাযুক্ত বাক্সগুলোর উচ্চতা প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার বা ছয় ফুট এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১১০ সেন্টিমিটার বা ৩ দশমিক ৬ ফুট। স্বয়ংক্রিয় কার্গো ব্যবস্থাটির পরিকল্পনা ব্যবসায়িক ডেলিভারির জন্য নেওয়া হয়েছে। এটি সফল হলে অন্যান্য রুটেও এ পরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা হতে পারে। শেষ পর্যায়ের ডেলিভারি অর্থাৎ গ্রাহকের বাড়ি পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর কাজে মানুষ হয়তো থাকবে। তবে ভবিষ্যতে চালকবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে।
জাপানে গাড়ি চালানো তেমন আকর্ষণীয় পেশা নয়। কারণ দীর্ঘ সময় রাস্তায় থাকতে হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডেলিভারি ট্রাকের দুর্ঘটনায় বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় এক হাজারের মধ্যে ছিল, যা ২০১০ সালে প্রায় দুই হাজার মৃত্যুর তুলনায় অনেকটাই কমেছে।
উল্লেখ্য, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাপানের মতো কম অপরাধপ্রবণ ও কম বসতি দেশের জন্য জন্য উপযোগী। বড় দেশগুলোর জন্য এ পরিকল্পনা উপযুক্ত নাও হতে পারে। তবে সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটেনেও এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে একটি ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া লন্ডনেও একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিপিডেন্ট ও এপি