বিশ্বের প্রাচীনতম সরীসৃপ প্রজাতির একটি প্রাণীর চামড়ার সন্ধান পেয়েছে গবেষকরা, যা ডাইনোসরদের পৃথিবীতে বিচরণ করার আগে বসবাস করতো বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা।
সরীসৃপের চামড়া খণ্ডটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার একটি চুনাপাথরের গুহায় পাওয়া গেছে, যা ডাইনোসর যুগের জীবাশ্মের চেয়ে অন্তত ১৩ কোটি বছর আগের বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কুমিরের চামড়া সাদৃশ
যুক্তরাষ্ট্রের টরন্টো মিসিসাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নুড়িযুক্ত পৃষ্ঠের সাথে একটি চামড়ার টুকরো সনাক্ত করেছেন যা দেখতে কুমিরের চামড়ার মতো। ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় টরন্টো মিসিসাগা বিশ্ববিদ্যালয়।
চামড়াটি প্রায় ২৯ কোটি বছর আগের প্রাচীনতম স্থলজ সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চামড়ার নমুনার সাথে সাদৃশ। এই ফসিলটি ভূ পৃষ্টের ওপরে বসবাস করা জীবন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনীয় অভিযোজনকে আরও জানার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
সমুদ্রকে শাসন করেছিল
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজি বিভাগের ধারণা “নতুন আবিষ্কৃত চামড়ার প্রাণীটি পৃথিবীর আদি মাংসাশী প্রাণী। এটি সমুদ্রকে শাসন করেছিল বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এই ধরণের আবিষ্কারগুলো এই অগ্রগামী প্রাণীদের সম্পর্কে গবেষকদের উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করতে পারে।”
গবেষণা দলের সহ-লেখক মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ্যা গবেষক ও টরন্টো মিসিসাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট রেইস মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে সিএনএনকে বলেছেন, “যে প্রাণীর চামড়া পাওয়া গেছে তা “খুবই বিরল”। সাধারণ “প্রাণী মারা যাওয়ার পরে শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ চামড়াও খুব সহজে পচে যায়। কিন্তু এই ফসিলটি ব্যক্তিক্রম।”
পলি,পানি ও হাইড্রোকার্বনের মিশেল গুহা
রেইস সিএনএনকে আরও বলেন, “রিচার্ডস স্পার চুনাপাথর গুহায় পাওয়া এই নমুনাটি গুহা ব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্টের কারণেই দীর্ঘ শতাব্দী পরেও চামড়াটি সংরক্ষিত ছিল। কাদামাটির পলি,পানি ও হাইড্রোকার্বনের মিশেল গুহার পরিস্থিতি সত্যিই খুব অস্বাভাবিক ছিল।”
গুহায় পড়ে থাকা প্রাণীটি কাদামাটির পলি, তেল ও হাইড্রোকার্বনের মিথস্ক্রিয়ায় সংরক্ষিত ছিল। এছাড়াও গুহাটি অক্সিজেনবিহীন পরিবেশ ছিল বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা।
পুরুত্ব এক মিলিমিটারের এক চতুর্থাংশ
২০১8 সালে একই জাতীয় একটি ফসিল পাওয়া যায়, যা বেশির ভাগ ছিল হাড় ও সহজেই চেনা যায়। তবে নতুন আবিষ্কৃত চামড়াটি অনন্য। এর পুরুত্ব এক মিলিমিটারের এক চতুর্থাংশ বা তার কম বলেও সিএনএনকে জানায় গবেষকরা।
আরও পড়ুন:
সাগর-মহাসাগরের ভয়ঙ্কর ঘাতক লরাইনোসরাস
গবেষণা দলটি ক্ষুদ্র চামড়ার জীবাশ্মের মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার সময় টিস্যু খুঁজে পেয়েছে, যা একটি আঙুলের নখের চেয়ে ছোট।
“গবেষকরা যা দেখেছেন তাতে তারা পুরোপুরি হতবাক হন। কারণ এটি গবেষকদের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত। এটি এমন একটি জীবাশ্ম যা গবেষকদের অতীতে ফিরে নিয়ে গেছে। প্রথম দিকের প্রাণীর চামড়া দেখতে কেমন হতে পারে তা দেখার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে জানায় গবেষকরা।
টিকটিকি সদৃশ প্রাণী
গবেষকরা বলেছেন যে নুড়িযুক্ত চামড়ার পৃষ্ঠটি কুমিরের চামড়ার মতো আর আঁশের মধ্যে থাকা অংশগুলো সাপ ও টিকটিকিতে পাওয়া যায় এমন উপাদান পাওয়া গেছে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা সত্ত্বেও, গবেষকদের পক্ষে নমুনাটি কোন প্রাণী বা দেহের তা বলা সম্ভব নয়, কারণ জীবাশ্মটি অন্য কোনও প্রাণীর সাথে মিলানো যাচ্ছে না বা কোনো প্রাণীর সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে তারা ধারণা করছেন এস প্রাণী ডাইনোসর যুগেরও আগে পৃথিবীতে বিরচরণ করতো।
গবেষণাটি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র; সিএনএন