একই আকাশে দুইটি চাঁদ দেখা যাবে৷ আগামী ৫৬ দিন আকাশে থাকবে দুইটি চাঁদ ৷ প্রায় তিন দশক পর এমন বিরল ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? আবার কবে এমন বিরল দৃশ্য দেখা যাবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দুনিয়াজুড়ে।
এমনই বিরল দৃশ্যের স্বাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী ৷ দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে
বিজ্ঞানীরা বিরল এই দৃশ্যের নাম দিয়েছেন ‘2024 PT5’ ৷ দ্বিতীয় এই চাঁদকে ‘মিনি মুন’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তাঁরা ৷
টেলিস্কোপের সহায়তায় দুইটি চাঁদ’কে খুব সহজেই দেখা যাবে ৷ খালি চোখে অবশ্য দেখা কঠিন। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরবে এই ‘চাঁদ’ ৷ এর ফলে পৃথিবী বা চাঁদের কোনও সমস্যা বা ক্ষতি হবে না।
দুইটি চাঁদ সম্পর্কে যা বলছে বিজ্ঞান:
বিরল এই দৃশ্যের সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন পদার্থবিদগণ। তারা জানান, আদতে এটি কোনও চাঁদ নয়, গ্রহাণু ৷ পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যবর্তী এই গ্রহাণু কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে ৷
চাঁদের সাথে অর্ধ-বৃত্তাকারে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে ৷ গ্রহাণুটির আকার বড় হওয়ায় একে ঠিক চাঁদের মতোই দেখতে হবে বলে জানান বিজ্ঞানীরা। ৷
নতুন চাঁদের আকার:
চাঁদের মতো দেখতে এই গ্রহাণুর আকার ৩৩ ফুট ৷ এটি পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করবে।এটি ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর চারপাশে আবর্তন সম্পন্ন করবে। ৫৬ দিন পরে এটি আবার তার বেল্টে’ ফিরে যাবে।
যেভাবে দেখা যাবে বিরল দৃশ্য়:
এই গ্রহাণুটি আকারে চাঁদ থেকে অনেক ছোট ৷ চাঁদের মতো উজ্জ্বলও না। শিলা উপাদান দিয়ে তৈরি এই গৃহাণু। এ কারণে পৃথিবী থেকে স্বাভাবিক চোখে দেখা কঠিন।
বিরল এই দৃশ্যটি দেখতে ৩০ ইঞ্চির টেলিস্কোপ প্রয়োজন। একটি বড় টেলিস্কোপের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে খুব সহজেই দেখা যাবে ‘মিনি মুন’কে ৷ ২৯ তারিখ থেকে নাসা ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা শুরু করবেন।
পৃথিবী বা চাঁদের কোনও সমস্যা হবে না:
২০১৩ সালে পৃথিবীর কাছে থাকা একটি গ্রহাণু বিস্ফোরিত হয় ৷ এর ফলে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু মানুষ আহতও হয়। আবারও পৃথিবীর কাছাকাছি চলে এসেছে একটি গ্রহাণু।
এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন দূরত্বে প্রদক্ষিণ করবে। এই দূরত্ব চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্বের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। পৃথিবীর কাছাকাছি বস্তুগুলো একটি ঘোড়ার নালের মতো পথ অনুসরণ করে।
যখন এটি ঘুরতে ঘুরতে কোনও গ্রহের কাছে আসে, তার গতিবেগ দুর্বল হয়ে যায় অথবা খুব বেশি হয় না। কিছু সময় ঘুরে তারা আবার নিজেদের কক্ষপথে ফিরে যায় বা শক্তি হারিয়ে বিনাস হয়ে যায়।
তবে, ২০২৪ পিটি৫ কিন্তু ধ্বংস হবে না। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে, ২৫ নভেম্বর তা সূর্যের চারপাশে ঘুরতে চলে যাবে। এ কারণে এই গ্রহাণু থেকে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
যখন দেখা যাবে:
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকার স্থানীয় সময় বিকাল ৩: ৫৪ মিনিটে এই বিরল দৃশ্য়টি দেখা যাবে ৷
তবে আকারে যেহেতু ছোট এবং অনুজ্জ্বলও, তাই খালি চোখে সেটিকে দেখা যাবে না আকাশে।
সাধারণ বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপেও ধরা দেবে না। বিজ্ঞানী ও মহাকাশ প্রেমীদের কাছে যে পেশাদার সরঞ্জাম থাকে কেবল সেই যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা মিলবে। বিজ্ঞানীরাও অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবি প্রকাশ করবেন।
বাংলাদেশ থেকে কি এই এই চাঁদ দেখা যাবে?
দ্বিতীয় এই চাঁদটি এতটাই ক্ষুদ্র যে, এটি খালি চোখে পৃথিবীর কোনো জায়গা থেকে দেখা যাবে না। এছাড়া এই গ্রহাণুটির উজ্জ্বলতাও কম।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও খালি চোখে চাঁদটি দেখতে পারবেন না। এজন্য ব্যবহার করতে হবে পেশাদার সরঞ্জাম।
পুনরাবৃত্তি ২৭ বছর পর:
কয়েক দশকে একবার ‘মিনি মুন’র ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ২০৫৫ সালে আবারো দেখা যেতে পারে।