একজন শিক্ষানুরাগী খাজা সলিমুল্লাহ

খাজা সলিমুল্লাহ। এই নামের মধ্যে রয়েছে বাংলার মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। কিছু করার জন্য শত বছর আয়ু দরকার নাই ৪০ বছর বয়সই যথেষ্ট। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি।

১২০ বছর আগে, খাজা সলিমুল্লাহ ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দান করেছিলেন বুয়েটের (BUET) জন‍্য। তখন সেটার নাম বুয়েট ছিলো না। ছিলো ঢাকা সার্ভে স্কুল।

সেটাকে তিনি রূপ দিলেন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে।বলে রাখা ভালো, খাজা সলিমুল্লাহার বাবার নাম ছিল আহসানউল্লাহ। পুরানো ঢাকার আহসান মঞ্জিল উনার নামেই প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আজ থেকে ১২০ বছর আগে, ১ টাকার মূল‍্য কতো ছিল ভাবতে পারেন? —আজকের দিনের আনুমানিক কয়েকশ টাকা।

সলিমুল্লাহ
নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯০৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সভায় বিনা বেতনে বাধ‍্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার দাবি তুলেন তিনি। —চিন্তা করা যায়!

পূর্ব বাংলায় কোন ইউনিভার্সিটি নেই। সলিমুল্লাহ সেটা মানতে পারলেন না। কি করা যায়, সে নিয়ে ভাবতে থাকলেন। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি, তখনকার ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসেন।

হার্ডিঞ্জের সামনে দাবি নিয়ে দাঁড়ানোর মতো সাহস পূর্ব বাংলায় যদি কারো থাকে, সেটা একমাত্র সলিমুল্লাহর। তার বয়স তখন চল্লিশ বছর।

সে সময়ের ১৯ জন প্রখ‍্যাত মুসলিম লিডার নিয়ে তিনি হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করেন। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের দাবি তুলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠার অন‍্যতম অগ্রদূত তিনি।

খাজা সলিমুল্লাহ
আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নবাব খাজা সলিমুল্লাহ

সলিমুল্লাহ ছিলেন আদ‍্যোপান্ত শিক্ষানুরাগী। পূর্ব বাংলায় শিক্ষার বিস্তারের জন‍্য, পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত করার লক্ষ‍্যে তিনি বহু বৃত্তি, বহু প্রকল্প চালু করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা এবং ঢাকা সার্ভে স্কুলকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে রূপ দেয়া ছিলো তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ‍্য অবদান।

শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, তাহলে পূর্ব বাংলার সেই মেরুদণ্ড তৈরিতে সলিমুল্লাহর চেয়ে বড়ো ভূমিকা সম্ভবত বিংশ শতকে খুব বেশি কেউ রাখেনি।

মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো পূর্ব বাংলার শিক্ষার জন‍্য আরো বহুকিছু করে যেতেন।

নবাব স‍্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের জন‍্য বিনম্র শ্রদ্ধা।