ঈদের ছুটিতে বিনোদন প্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দ যোগ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে ঘুরে বেড়ানো। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। গাজীপুরে ঈদ আনন্দে পার্ক-রিসোর্ট, সুটিং স্পট ও নামকরা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ঢল নেমেছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে, গাজীপুরের নামকরা পার্ক ও রিসোর্টগুলোতে দুপুর গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলের ছায়া নেমে আসা মাত্রই বিভিন্ন পেশাজীবীদের পাশাপাশি নারী, শিশুসহ সব শ্রেণীর বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায় গাজীপুরজুড়েই আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে।
দেশের বিভিন্ন জনপদের মানুষও ছুটে আসছে
ঈদের ছুটির এই সময়ে শুধু গাজীপুর জেলার বাসিন্দারাই নয়। আশেপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জনপদের মানুষজনও প্রতিদিন দিনই ছুটে আসছে এখানকার অবকাশ কেন্দ্রগুলোতে। হাজারও কর্ম ব্যস্তার ফাঁকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার জন্য।
গত বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ে গাজীপুরের বিনোদন পার্কে ব্যাপক দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটবে। এমন সম্ভাবনা উপলব্ধি থেকেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই জেলার সরকারি-বেসরকারি উদ্যানগুলোর পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের চিত্ত বিনোদন নির্বিঘ্নে যেতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চকচকে ঝকঝকে করে সাজানো হয়েছে
বিভিন্ন রিসোর্স ও পার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে, দর্শনার্থীদের সুন্দরভাবে চিত্ত বিনোদন দিতে উদ্যানগুলোর ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর ওয়াকওয়ে, ফুলের বাগান, থাকার ঘর, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি জায়গাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চকচকে ঝকঝকে করে সাজানো হয়েছে।
গাজীপুরবাসীর বিনোদনের চাহিদার কথা বিবেচনা করে জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদার দিঘি গ্রামে সীগাল রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে।
এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশী ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছের সমারোহে প্রায় ৪২ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত সীগাল রিসোর্টকে আরো প্রশান্তিময় করে তুলেছে। এই রিসোর্টে আছে কিডস জোন, মিনি চিড়িয়াখানা, কনফারেন্স রুম, রেস্টুরেন্ট, লেক এবং খেলার মাঠ।
রমজানের এক মাস দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল না
এই রিসোর্স রমজানের পুরো এক মাস বিনোদন প্রেমীদের তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি। তাই পার্ক কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ঢল নামার সম্ভাবনা থেকেই ঈদের তিন দিন আগে থেকে রিসোর্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে।
১৬ এপ্রিল দুপুরে এই রিসোর্স গেটে এক বিনোদন প্রেমী শরিফুল ইসলাম জানান,তিনি ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আজ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে এখানে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি সব ঘুরে দেখলাম ঈদ উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ রিসোর্স পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলেছে।পরিবারের সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দ উপভোগ করছেন।
ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা বারো তোপা এলাকায় অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে কয়েক একর জায়গা নিয়ে গড়ে তুলা হয়েছে একটি ফ্যামেলি পার্ক। পার্কটির নাম ডক্টর গ্রীণ পার্ক। এই পার্কে শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।
তবে দুই ঈদের সময় বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ঢল নামে। দলে-দলে বিনোদন প্রেমীরা ছুটে আসছে। এখানে জয়দেবপুর থেকে আসা মুনিয়া আক্তার নামে এক দর্শনার্থী জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর স্বামী ঢাকায় এক কোম্পানিতে চাকরি করেন।
দুই ঈদের সময় ছাড়া এক সঙ্গে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথাও ঘুরাঘুরি করতে সময় পাওয়া যায় না। আজ তাই ফ্যামেলি এই পার্কটিতে ঘুরতে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে এসে কিছুটা বিনোদন পেয়ে বাচ্চাও অনেক আনন্দ উপভোগ করছে।
গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার নুহাশ পল্লীর পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফজলু মিয়া বলেন, নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন স্যারের মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকীতে মাঠ-ঘাট-ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
এছাড়া বছরের দুই ঈদের সময় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ের কথা চিন্তা করে পার্কের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। ঈদের পর দিন থেকেই নুহাশ পল্লীতে প্রচুর বিনোদন প্রেমীদের আনাগোনা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের এই পল্লীর সুবাদে হোতাপাড়া এলাকায় এক আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। আরও কয়েক দিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কম যায়নি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
অপর দিকে দেশের অন্যতম সেরা ও এশিয়ার বিখ্যাত সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও কম যায়নি। উপচে পড়া ভিড় লাগার সম্ভাবনায় পার্ক কর্তৃপক্ষ রমজানের শেষ সাত দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা শুরু করেছে।
এই পার্কের দিন মজুর নাসির উদ্দিন জানান, ঈদের সময় দর্শনার্থীদের ভাল পরিবেশ উপহার দিতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ জন ওয়ার্কার দলবদ্ধভাবে পার্কের বিভিন্ন জায়গা পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। ঈদের আগের দিনও সর্বশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী বন সংরক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের দিন বিকেল থেকেই মানুষের প্রচুর সমাগম হবে।
বিপুলসংখ্যক এই দর্শনার্থীদের সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতেই সিংহ বেষ্টনী, আফ্রিকান সাফারিসহ সব বেষ্টনী পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।পার্কের দর্শনার্থীদের নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্পট সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ঘুরে দেখতে পারেন, সে জন্য গাড়ি পার্কিং ও অন্যান্য স্পট সাজানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঈদের প্রথম দিন বিকেলে পার্কে প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্তবয়স্ক, ছাত্র-ছাত্রী ও বিদেশীসহ ১৩ হাজার ৩১২টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও প্রায় ২০ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। আরও কয়েক দিন এমন থাকবে বলেও জানান তিনি।
গাজীপুর থেকে এম. এস. রুকন