আমেরিকার ভেটোতে জাতিসংঘে ধাক্কা খেলো ফিলিস্তিন। ফলে গাজ়ায় আক্রমণ অব্যাহত রাখল ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ৬৩ জন। এই এলাকায় চাষের জমি তছনছ করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
এরই মাঝে জাতিসংঘে আমেরিকার ভেটোতে ধাক্কা খেলো ফিলিস্তিন। ২১ এপ্রিল জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাব পেশ হয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে। সেখানে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্য পদ লাভের পথ আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ হয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে, আমেরিকার ভেটোয় পাশ হলো না সেই প্রস্তাব। আলজেরিয়ার পেশ করা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১২টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ড।
জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দেওয়ার অর্থ ফিলিস্তিনকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। ইসরায়েলের বন্ধুরাষ্ট্র আমেরিকা ফিলিস্তিনকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাইবে না, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু আমেরিকার এই পদক্ষেপ নানা মহলে সমালোচিক হয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মতে, ‘ আমেরিকার ভেটো আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ভেটো ফিলিস্তিনকে অন্ধকারে ঠেলে দিল।’
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুরের অবশ্য দাবি, ‘আমেরিকার বাধায় প্রস্তাব পাশ আটকে গেলেও আমাদের আশা, প্রত্যয়কে ধ্বংস করা যাবে না। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।’
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও আমেরিকার পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়ে দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চ ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়ার পক্ষপাতী, আমেরিকাই তাতে বাধা দিচ্ছে। আমেরিকার বাধা পেরিয়ে ফিলিস্তিনিদের লড়াই ও আত্মমর্যাদার অধিকারকে আন্তর্জাতিক মহলের সম্মান কামনা করে হামাস।
এদিকে কাতার, মিশর ও তুরস্কের মতো একাধিক দেশ আমেরিকার পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কাতার ও মিশর বলছে, আমেরিকার এই পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দিল।
তুরস্ক বলছে, ‘সবাই যখন ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তখন আমেরিকা আচমকা ইসরায়েলকে সমর্থনের রাস্তা বেছে নিল। অবশ্য আমেরিকার কাছে অন্যরকম প্রত্যাশাও তুরস্কের ছিল না বলেও জানায় দেশটি।
বন্ধুরাষ্ট্র আমেরিকার এই পদক্ষেপে খুবই খুশি ইসরায়েল। এক প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাবটাই লজ্জাজনক। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বুকে নৃশংস হামলার পর কেন কেউ হামাসের নিন্দা না করে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভেটোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য ফিলিস্তিনকে পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন, তা আমেরিকা মানে, সমর্থনও করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একাধিকবার বলেছেন, ‘‘সংঘাত মেটাতে দুই রাষ্ট্র সমাধানই ভরসা। কিন্তু ফিলিস্তিন কি সত্যিই পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে ‘’
‘‘রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করার কথা আমরা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা শোনেনি। উল্টো হামাসের মতো একটা জঙ্গি সংগঠন ফিলিস্তিনের মাটিতে বসে পেশিশক্তির আস্ফালন দেখাচ্ছে, গাজায় প্রভাব খাটাচ্ছে।’’
এদিকে পরাশক্তি রাশিয়া দাবি করেছে, ‘‘আমেরিকা শুধু ইসরায়েলের স্বার্থই দেখছে। ফিলিস্তিনের নিজস্ব রাষ্ট্র দেওয়ার কোনও ইচ্ছেই আমেরিকার নেই।’’
বছরের বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন
জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হলেও ২০১২ সালে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পায় ফিলিস্তিন। পূর্ণ সদস্য পদ পেতে দীর্ঘ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।
নিয়ম মতো, ফিলিস্তিনের আবেদন প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেতে হবে। এরপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আবেদনের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন। এর পরেই স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে ফিলিস্তিন।
২০১১ সালে পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হতে প্রথমবারের মতো আবেদন করেছিল ফিলিস্তিন। এরপর গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিন চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে আবারও সদস্য পদের জন্য আবেদন করে।