করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে থমকে যায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো।
দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে যায় দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানও রয়েছে একই পথে। সব অর্থনৈতিক সূচকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে দেশটি।
তবে নানা সংকট ও অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখনও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক সফলতা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্ব মহলে। মিলছে নানা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
আর বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে গত ৫ জুন, স্বয়ং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি জং।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট পেশ করেছে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ। অথচ পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশে নানা সমস্যা থাকলেও বাধা পেরিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ঠিক কতটা উন্নতি করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের দিকে নজর দিলে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। তখন পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নতুন অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের কাছে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম আর তাও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে।
পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে সুতার মূল উপকরণ তুলার উৎপাদন তেমন একটা না হলেও হাজার হাজার পোশাক কারখানা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে পাকিস্তানের ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান মাত্র ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রপ্তানি ও পরিসেবা দিতে সক্ষম, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
পাকিস্তান তার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে, যা দেশটির জনগণকে বিপাকে ফেলেছে। অতিরিক্ত খরচ এবং আমদানি নীতির দ্বারা জ্বালানি, অস্থিতিশীল বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ দেশটির অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করেছে।
অপরদিকে বাংলাদেশে কার্যকর নেতৃত্ব, বিচক্ষণ রাজস্ব নীতিসহ মানব উন্নয়নের দিকে অধিকতর গুরুত্বের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি এবং বেকারত্ব হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বেকারত্ব হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ছিল ৬ শতাংশের ওপরে।
পাকিস্তানের কাছ স্বাধীনতা অর্জন করা সত্বেও বাংলাদেশ সব সূচকে এগিয়ে যাওয়ায় গোটা বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।