হাওরে যাবো..

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আমার জন্য বসে আছে এক ‘স্বপ্নতরী’। বজরার আদলে এই জলচরের কথা সুযোগ পেলেই আজকাল ঘনিষ্টজনদের কাছে বলে বেড়াচ্ছি।

পানির মৌসুমে এর আগে যতবারই হাওরে গেছি, মনের মতো নৌকা পাওয়া নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়েছি। সম্পর্কের সৌহার্দ্যে সেই আমিই আজ এক বজরার মালিক বনে গেছি!

রাজহাঁসের মতো দেখতে সুন্দর এই নৌকাটি বানিয়েছে আমার ছোট ভাই সোহেল। কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদের সহোদর সে। প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করেছে।

একটি জরিপের কাজে কয়েক মাস কাজ করার সুবাদে হাওরের জলজ জীবনের প্রেমে পড়ে গেছে। আর খাঁটি প্রেমিকের মতোই স্বপ্নের এক তরী বানিয়ে হাওরের সঙ্গে সম্পর্ককে পাকাপোক্ত করেছে সে।

প্রেমময় সেই নৌকায় চড়তে তর সইছে না আমার! ভাবছি- কখন যাবো, কিভাবে যাবো? জল আর জোৎস্নার তালে তালে বিরহী মাতালের মতো ভেসে বেড়াবো।

দিনক্ষণ ঠিক না হলেও হাওরে পানি আসার আগেই থেকেই আমি রেডি হয়ে বসে আছি।

হাওরে ৮/১০ জনের দল বেঁধে ঘুরতেই বেশি ভালো লাগে। তাই মনে মনে এমন একটা দলও বেঁধেছি। যদিও তাদের কাউকেই বিষয়টি এখনও জানানো হয়নি। শুধু এটুকু জানি, আমি বললেই তারাও সব ব্যাগ গুছিয়ে রেডি!

তবে আমার মনের মানুষ এত বেশি যে, তাদের সবাইকে নিয়ে হাওরে ঘুরতে চাইলে পুরো মৌসুম আমার হাওরেই কেটে যাবে।

প্রথম ভ্রমণে যাদের সঙ্গ পেতে আমি ব্যাকুল হয়ে আছি, তাদের মধ্যে জালাল সাধক ও বাবু সুনীল কর্মকারের স্নেহধন্য সঙ্গীত তারকা ইমন তালুকদার অন্যতম।

আসরি গানের রাজা তিনি। এই রাজার রানীও সঙ্গীত সাধনা করেন। তার প্রতিও নিমন্ত্রণ রইলো।

ঢাকা থেকে যাদের বগলদাবা করে নিয়ে যাবো- তাদের মধ্যে আমার পরম বন্ধু লেখক-কবি কামরুল আহসান আর সোহেলী মণি আপার কথা না বললেই নয়। গত বইমেলায় প্রকাশিত কামরুল আহসানের ‘মহাজীবন’ উপন্যাস পড়ে মহা অনুভূতির কথা হাওরে ভেসে ভেসেই তাকে জানাবো।

আর সোহেলী আপা আমার ক্যাম্পাসের বড় বোন। একটি ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। আমার ছন্নছাড়া কবি বন্ধুটিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এই চিরকিশোরী।

বগলদাবা করবো কবি সাঈদ জুবেরিকেও। তার ছোট ভাই আমি। মজার ব্যাপার হলো- জুবেরি ভাইয়ের জীবনসঙ্গী নাদিয়া আপাও আমার ক্যাম্পাসের বড় বোন।

কোনো একটা কাজে সুইডেনে আছেন এখন। ফিরবেন শিগরিরই। জুবেরি ভাইয়ের প্ররোচনায় তিনিও রাজি হয়ে যাবেন, আশা করছি।

আর ময়মনসিংহ থেকে ধরে নিয়ে যাবো প্রিয়তম বন্ধু নাজমুস সাকিব শুভকে। আমাকে ক্যাম্পাসে রেখেই সে নিউইয়র্কে পাড়ি জমিয়েছিল। এক যুগ পর এবার দেশে ফিরেছে।

এই এক যুগে দুষ্টু এক মেয়ের বাবা হয়ে গেছি আমি। আর নিঃসঙ্গ প্রবাস জীবনে থেকে শুভর মন এখনও কিশোরই রয়ে গেছে।

ময়মনসিংহে আরও এক বিশেষ মানুষ রয়ে গেছে আমার। আশরাফ ভাই। উপ-কর কমিশনার হিসেবে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় আশরাফ ভাইময় ছিল আমার জীবন। আশরাফ ভাই আবার জুবেরি ভাইয়ের ঢাকা কলেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু! মনে হচ্ছে, হাওরের কথা শুনলে, আশরাফ ভাই-ই আমাদের বগলদাবা করে নিয়ে যাবেন।

তালিকায় কত জন হলো মোট?

শুরু থেকে হিসেব করে দেখলাম, আমি সহ মোট ৯ জন। আর মৌরির কূটচালে তাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলে, দলটি ১০ জনেও গড়াতে পারে। তাতেও সমস্যা নেই কোনো। চারটি ক্যাবিন আর পর্যাপ্ত পরিসরে বজরাটি আমাদের বেশ ভালোভাবেই আশ্রয় অবকাশ দেবে।

কিন্তু হায়! আমার আরও কতো কতো প্রিয় মানুষ বাকি রয়ে গেল! কতো বন্ধু, প্রেমিকা, প্রিয়জনকে হাওর ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছি। একে একে সবাইকে নিয়ে যাবো। জোর করে হলেও..

একদিন।

কলমে: পরাগ মাঝি, লেখক সাংবাদিক ও অনুবাদক