সালমান শাহ-এর সেরা পাঁচ সিনেমা

বাংলা সিনেমার জগতের এক কিংবদন্তি নাম সালমান শাহ। বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ ও স্টাইল আইকন সালমান শাহ। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির নামও সালমান শাহ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে এমন দাগ কেটে গেছেন, যা তা বিদায়ের ২৩ বছর পরেও একই চর্চা হচ্ছে।

কম সময়ের ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এর মধ্যে অধিকাংশই ব্যবসায়িক দিক থেকে সফলতা অর্জন করেছে। ২৭টির মধ্যে মাত্র সালমান শাহ এর ৫টি সেরা সিনেমা নিয়ে সাজানো হয়েছে জার্নালস মনিটর এর এই নিবন্ধটি।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত:

৯০-এর দশকের সিংহভাগ সিনেমার কাহিনী ছিল পরিবার নির্ভর, তরুণ প্রজন্মের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে সেভাবে সিনেমা বানানো হচ্ছিল না। এমন এক অসময়ে নাইম-শাবনাজ জুটির মাধ্যমে তারুণ্যের গল্প আবারো বাংলা সেলুলয়েডের পর্দায় ফিরে আসে।

নতুন এক তরুণ জুটিকে দিয়ে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। এই জুটির সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন এক তরুণ জুটিকে দিয়ে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। নায়ক হিসেবে ২১ বছরের এক যুবককে বেছে নেন সোহান।  শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামের সেই যুবকই পরিচালক সোহানের হাত ধরে সিনেমার জগতে হয়ে উঠেন সালমান শাহ।

নায়িকা হিসেবে নেওয়া হয় সেই সময়ের আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী মৌসুমিকে। এই নতুন জুটিকে নিয়ে আনন্দ মেলা সিনেমার ব্যানারে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ ঈদে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা। তুমুল জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর অফিসিয়াল রিমেক হওয়ায় গান ও কাহিনী সবকিছুতেই হিন্দি সিনেমাটিকে অনুসরণ করা হয়।

সিনেমার মূল কাহিনী শুরু হয় মির্জা ও খান পরিবারের বিরোধীদের মধ্য দিয়ে। তবে এই দ্বন্দ্বের দেয়াল ভেঙে মির্জা পরিবারের ছেলে রাজ ও খান পরিবারের মেয়ে রেশমি প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এই প্রেমের কাহিনীকে ঘিরেই পুরো ছবির গল্প অগ্রসর হতে থাকে।

রিমেক হওয়া সত্ত্বেও প্রেক্ষাগৃহে তাক লাগিয়ে দেয় ‘‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’’  সিনেমাটি।

নতুন এই জুটিকে সাদর আমন্ত্রণে গ্রহণ করে নেন দেশের সিনেমামোদীরা। বলিউডে রাজ চরিত্রে আমির খানের মতো একজন নায়ক অভিনয় করলেও নবাগত সালমান শাহ তাকে অনুসরণ করেননি।

নিজের মতো করে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। সে কারণেই ছবিটি দুর্দান্ত ব্যবসা করতে সক্ষম হয় বলে মনে করেন সিনেমা বোদ্ধারা। ঢালিউডের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ আয় করা ছবিটি প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেছিল। তাছাড়া এর মধ্য দিয়েই সঙ্গীত শিল্পী আগুনের অভিষেক ঘটে, তার গাওয়া সব গান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যায়।

প্রথম সিনেমাতেই এমন অভাবনীয় সফলতার কারণে সালমান শাহ-মৌসুমী জুটি নিয়ে সেই সময়ে প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক শীর্ষে। তবে তুচ্ছ একটি ঘটনায় সৃষ্ট মনোমালিন্যর কারণে তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরে। তুমুল জনপ্রিয়তা থাকার পরেও মাত্র চারটি ছবি করেই এই জুটির যাত্রা থেমে যায়।

বিক্ষোভ:

চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সাথে জুটি ভেঙে যাওয়ায় পরবর্তীতে সেই সময়ের আরেক উঠতি নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সালমান শাহ। এই জুটি গড়ার পূর্বে অল্প কিছু সিনেমায় শাবনূর অভিনয় করলেও সেগুলোর কোনোটাই ব্যবসায়িকভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। তাই নায়িকা হিসেবে শাবনূরকে নিয়ে সালমান শাহ কতটুকু সফলতা পাবেন তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।

তবে সবার সংশয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এখানেও তিনি সফলতা ছিনিয়ে আনেন। শাবনূরের সাথে তার জুটি এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা জুটিগুলোর একবারে চূড়ায় অবস্থান করে।

সালমান শাহ- শাবনূর জুটি অভিনীত মোট সিনেমার সংখ্যা ১৪টি, যার মধ্যে বেশিরভাগই রোমান্টিক সিনেমা

এই জুটি অভিনীত মোট সিনেমার সংখ্যা ১৪টি, যার মধ্যে বেশিরভাগই রোমান্টিক সিনেমা। তবে ডি এম ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত বিক্ষোভ সিনেমাটি ব্যতিক্রম, রোমান্টিক এই জুটিকে নিয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দারুণ একটি অ্যাকশন নির্ভর সিনেমা তৈরি করেন নির্মাত মুহাম্মদ হান্নান।

গল্পের শুরুটা হয় আসাদ নামের এক শ্রমিক নেতার মৃত্যু দিয়ে, তারই দুই বন্ধু মাহমুদ চৌধুরী ও শারাফাত আলী খান ষড়যন্ত্র করে তাকে খুন করেন কিন্তু একা রাজত্ব করার আশায় শারাফাতের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে চৌধুরী, আসাদকে খুনের দায়ে ১৪ বছরের জেল হয়ে যায় শারাফাতের।

দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিকেএক নেতায় পরিণত হয় মাহমুদ, নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্যাডার পুষে তাদের দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার পরিকল্পনা আটে সে।

তবে তারই হাতে খুন হওয়া আসাদের ছেলে অনিক তখন সেই কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি, বাবার মতো অনিকও চৌধুরীর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। চৌধুরীর মেয়ে নূপুরও একই কলেজে পড়তো, এই অন্যায়ের প্রতিবাদে অনিকের পাশে দাঁড়ায় ।

এদিকে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেই একটি সংবাদপত্র চালু করে চৌধুরীর সব কুকীর্তি ফাঁস করতে থাকে শারাফাত। এই ত্রিমুখী বিরোধের সাথে কলেজে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ঘিরেই অগ্রসর হয়েছে সিনেমার গল্প।

সালমান শাহ ও শাবনূর ছাড়া সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর, রাজিব, তুষার খান, নাসির খান, দিলদারের মতো গুণী শিল্পীরা। তারা সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে সিনেমাটা উপভোগ্য করে তুলেছিলেন। রাজিব ও নাসির খানের মধ্যকার দ্বৈরথটি ছিল ভীষণ উপভোগ্য। তাদের দুজনের দারাজ কন্ঠের শত্রুতা আজও টেলিভিশনে শুনা যায়।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে সিনেমার গানগুলোও ছিল অসাধারণ, বিশেষ করে ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়’ এবং ‘একাত্তরের মা-জননী’ গান দুটি তো হালের জনপ্রিয় গানের তালিকায় অবস্থান করছে। এসব কারণে ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবেও দারুণ সফলতার মুখ দেখে।

সবকিছু ছাপিয়ে এই ছবিটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সালমান শাহ এর ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয়। ছাত্রনেতা হিসেবে তার নির্ভীক আচরণ ছিল পুরো আকর্ষণ সিনেমার। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও অ্যাকশন নায়ক হিসেবে তার যোগ্যতা যে কোনো অংশেই কমতি ছিল না, এর মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছেন সালমান নিজেই।

স্বপ্নের ঠিকানা:

সালমান শাহ-শাবনূর জুটির সবগুলো সিনেমাই ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য পায়। কিন্তু এটলাস ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমাটির কথা আলাদা বলতে হচ্ছে। ব্যবসায়িকভাবে সালমান শাহ’র ক্যারিয়ারের সফলতম সিনেমা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’।

নির্মাতা এম.এ. খালেকের পরিচালনায় ১৯৯৫ সালের ১১ মে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পায় ছবিটি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই একই দিনে মৌসুমী-ওমর সানি জুটির ছবি মুক্তি পাওয়ায় ঢাকার নামকরা হলগুলো এই সিনেমা নিতে চায়নি!

তবে মফস্বলের প্রেক্ষাগৃহে এই ছবির অভাবনীয় সাফল্যের কারণে পরের সপ্তাহেই সিনেমাটি ঢাকায় মুক্তি পায়।

সিনেমাটির গল্প সাদামাটা ছিল। ধনীর ছেলে সুমন ও গরীব ঘরের মেয়ে সুমির মাঝে গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। তবে সুমনের বাবার বন্ধুর মেয়ে ফারাহ আবার ছোটবেলা থেকেই সুমনকে ভালোবাসে। নব্বইয়ের দশকের সেই চিরচেনা ফর্মুলা ত্রিকোণ প্রেমের টানাপোড়েন নিয়েই আগাতে থাকে সিনেমার গল্পটি।

গল্প চিরচেনা হলেও পরিচালকের মুনশিয়ানায় সেটা হয়েছে উপভোগ্য বেশ ভালোভাবেই। সালমান শাহ আর শাবনূরের রসায়নটা ছিল মনে রাখার মতো, ফারাহর মতো আধুনিক মেয়ের চরিত্রে সোনিয়াও দারুণ অভিনয় করেছিলেন স্বপ্নের ঠিকানা সিনেময়।

তাছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে রাজীব, প্রবীর মিত্র, আবুল হায়াত, দিলদার, ডলি জহুরের মতো শক্তিমান ও গুণী অভিনেতারা প্রতিটি চরিত্রই দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলেছিলেন এই সিনেমাটি।

সিনেমা হিট হওয়ার পথ্যে গানগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখে, স্বপ্নের ঠিকানাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক আর ‘ও সাথীরে যেওনা কখনো দূরে’ গান কালজয়ীর আসন দখল করে আছে।

তাছাড়া হিন্দি গান থেকে অনুপ্রাণিত ‘নীল সাগর পার হয়ে’ গানটি এখনো বেশ জনপ্রিয় গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আর এসব কারণেই প্রায় ১৯ কোটি টাকা আয় করা এই সিনেমা ঢালিউড বক্সঅফিসের ইতিহাসে এখনো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

কন্যাদান:

বর্তমান যুগের নায়করা নিজেদের চিরচেনা চরিত্র থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করতে সাহস না দেখালেও এই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ছিলেন সালমান শাহ। গৎবাঁধা সিনেমায় নিজেকে আবদ্ধ না রেখে গল্পনির্ভর পারিবারিক সিনেমাতেও অভিনয়ে বাজিমাত করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ এমন এক ছবি।

মানসিক রোগীর ডাক্তার শাহানাকে ঘিরে গল্প শুরু হয়, তার স্বামীও একজন ডাক্তার। শাহানার কাছে শ্রাবণ নামের এক যুবক তার গর্ভবতী স্ত্রী বর্ষাকে নিয়ে আসে। শ্রাবণের ভুলে এক বছরের পুত্রকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বর্ষা। শাহানা তার সবটুকু দিয়ে বর্ষাকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে থাকেন তবে  কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না।

এমন সময় বর্ষা এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়, তবে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিজের কন্যার দেখভাল করা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল।

এদিকে নিজের ভুলে আগের সন্তানকে হারানোয় এই সন্তানকে একা বড় করে তোলার সাহস শ্রাবণও দেখাতে পারছিল না।

শেষে নিঃসন্তান দম্পতি শাহানা ও তার স্বামীর কাছেই নিজের কন্যাকে রেখে আসে শ্রাবণ। এভাবে পাঁচ বছর চলে যাওয়ার পর শাহানার একাগ্র চেষ্টায় বর্ষা সুস্থ হয়ে যায়। তবে এরপরেই টানাপোড়েন লেগে যায়, সুস্থ হয়ে সব বিষয়ে জানার পর নিজের মেয়ে ঊর্মিকে ফিরে পেতে চায় বর্ষা।

এদিকে ছোটবেলা থেকে নিজের কন্যাসম স্নেহে বড় করে তোলায় শাহানাও কিছুতেই ঊর্মিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে চায় না। এই টানটান উত্তেজনার মাঝেই এগিয়ে গেছে সিনেমার গল্প।

এই সিনেমায় সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন লিমা, তার অভিনয়ের নৈপুণ্য মনে রাখার মতো না হলেও গুণী অভিনেত্রী শাবানা, আলমগীর আর হুমায়ূন ফরিদীর মতো শক্তিমান তিন অভিনেতার অভিনয়গুণে বেশ উপভোগ্য হয় সিনেমাটি।

মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটির কাহিনী ভূয়সী প্রশংসা পায়। তাছাড়া এই ছবির দুটি ভিন্ন সময়ের পরিসাজে সালমান শাহ যেভাবে নিজের মাঝে পরিবর্তন এনেছিলেন সত্যিই অতুলনীয় ও প্রশংসার দাবিদার। এসব কারণেই ‘কন্যাদান’ সালমান শাহ এর সেরা পাঁচ সিনেমার মধ্যে একটি হয়ে আছে।

সত্যের মৃত্যু নেই:

কম সময়ের মধ্যেই সালমান শাহ জনপ্রিয়তার একেবারে শীর্ষে অবস্থান করেন। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিল। এমন এক সময়ে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সেই ভয়াবহ দুঃসংবাদটি এলো, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য জগতে পাড়ি জমান।

সেদিন সকালে তার নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়, তবে তার ভক্তরা কিছুতেই প্রিয় নায়কের আত্মহত্যার ব্যাপারটা মেনে নিনে পারছিলেন না।

হত্যা নাকি আত্মহত্যা – এই প্রশ্নের দোলাচলে পুরো দেশ দোদুল্যমান। ঠিক সেই সময়ে সালমান শাহ এর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরেই মুক্তি পায় নির্মাতা ছটকু আহমেদ এর ‘সত্যের মৃত্যু নাই’ সিনেমাটি।

সালমা নামের এক সত্যবাদী সাহসী এক নারীর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু হয়। কুখ্যাত সন্ত্রাসী হারকুলারের বিপক্ষে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেন সালমা। সেটার শোধ তুলতে হারকুলারের লোকজন তার বাসায় হামলা চালায়। হামলায় সালমার ছোট বোন মারা যায়।

এদিকে ছোট বোনের স্বামী কিছুদিন পর আবার বিয়ে করে, সৎ মায়ের সংসারে বোনের ছেলে রানার কষ্ট হতে পারে সেটা ভেবে রানাকে নিজের কাছে রাখে সালমা। তবে রানার প্রতি অতিরিক্ত যত্ন নিতে গিয়ে নিজের ছেলে জয়কে ধীরে ধীরে দূরে ঠেলে দেয় সালমা।

ফলে রানা বড় হয়ে ব্যারিস্টার হলেও জয় হয়ে যায় রাস্তার ছেলে। সে সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুরে বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে লিপ্ত থাকে। ঘটনাক্রমে রানার বাবার খুনের আসামী হিসেবে অভিযুক্ত হয় যায় জয়।

আর সেই খুনের সাক্ষী হিসেবে আদালতে ডাকা হয় জয়ের মা সালমাকে। পরিস্থিতি ঠিকভাবে বুঝতে না পেরে জয়কে খুনি ভেবে তার বিপক্ষে সাক্ষী দেন জয়ের মা সালমা।

নিজের ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে এগিয়ে দেওয়ায় চারিদিকে সালমার জয়ধ্বনি চলতে থাকে।

তবে জয়ের ফাঁসির দিন সালমা জানতে পারে যে জয় আসলে খুনটা করেনি। যে সত্যকে প্রতিষ্ঠার আশায় নিজের ছেলেকে কুরবানি করতেও সালমা দ্বিধাবোধ করেনি।

শেষ মুহূর্তে আসল সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে সালমা কী তার পুত্র জয়কে বাঁচাতে পারবে? না মিথ্যার আড়ালে সত্য ডুবে যাবে? এমন টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়েই ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবির গল্প অগ্রসর হতে থাকে।

সালমার চরিত্রে গুণী অভিনেত্রী শাবানা আর সালমার ছেলে জয়ের চরিত্রে সালমান শাহ এর অনবদ্য অভিনয় সে সময়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাছাড়া অন্যান্য চরিত্রে আলমগীর, রাজিব, শাহনাজ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মিশা সওদাগরের মতো গুণী শিল্পীদের অভিনয়ও দর্শকদের মনে দাগ কাটে।

সালমান শাহ এর মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ পর এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় এটি দেখতে সিনেমা হলে জনতার ঢল নামে। সিনেমায় জয়ের ফাঁসির আগমুহূর্তে তার করুণ দৃশ্যগুলো যেন সালমানের সত্যিকারের মৃত্যুকেই ফুটিয়ে তুলছিল।

ফাঁসির চিঠি পাওয়ার পর সালমান শাহ যখন ‘চিঠি এলো জেলখানাতে অনেকদিনের পর’ গানটায় অভিনয় করেন, তখন হলের দর্শকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দর্শকদের এই তুমুল ভালোবাসার কারণে সিনেমাটি আলোড়ন তৈরি করে। সব শ্রেণীর দর্শকরাই সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যান। দর্শকদের ভালোবাসায় সিনেমাটি সর্বমোট প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকা আয় করে। ঢালিউড বক্সঅফিসের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় করা ছবি এটি।