সাগরের নিচে ১০,০০০ বছর আগের রহস্যময় পিরামিড

প্রাচীন পৃথিবী নিয়ে আমরা যা জানি তা বদলে দিতে যাচ্ছে সাগরের নিচে খোঁজ পাওয়া নতুন রহস্যজনক একটি পিরামিড। জাপানের রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের কাছে পানির ৮২ ফুট নিচে ডুবে থাকা প্রাচীন এই সভ্যতা সম্পর্কে গবেষকদের ধারণা ও হাজার বছর ধরে মানুষের অর্জিত জ্ঞান বদলে যাবে।

ইয়োনাগুনি স্মৃতিস্তম্ভ নামে পরিচিত তাইওয়ানের এই ঐতিহাসিক রহস্যময় কাঠামোটি জাপানের কাছেই অবস্থিত। এটি ১৯৮৬ সালে  রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জের কাছে আবিষ্কার হয়েছিল। জাপানের কাছে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে অদ্ভুত কিছু উপাদানের উপস্থিতি এটিকে রহস্যময় করে তুলেছে।

সাগরের নিচে  খোঁজ পাওয়া পিরামিড নিয়ে গবেষণা করছেন গবেষকরা, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট

ধারালো কোণযুক্ত ধাপ ও স্বতন্ত্র পিরামিডের মতো আকৃতি রয়েছে পিরামিডটির। এ ছাড়া এটি সম্পূর্ণ পাথর দিয়ে তৈরি। এসব কারণে এটি রহস্যময় হয়ে উঠেছে। সাগরের ৮২ ফুট গভীরে অবস্থিত, প্রায় ৯০ ফুট উঁচু এই স্মৃতিস্তম্ভটি মিশরের পিরামিডের আগে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এটি ‘জাপানের অ্যাটলান্টিস’ নামেও পরিচিত। অ্যাটলান্টিসের মতোই ইয়োনাগুনি এমন একটি সভ্যতার ইঙ্গিত দেয় যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুছে গেছে। সম্ভবত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণেই অ্যাটলান্টিসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

ডুবে থাকা পিরামিডের ধারালো কোণযুক্ত ধাপ, ছবি: ডেইলি মেইল

পৌরাণিক উপকথা অনুযায়ী, অ্যাটলান্টিস হচ্ছে সমুদ্রতলে হারিয়ে যাওয়া একটি দ্বীপ। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খৃষ্টপূর্ব ৩৬০ অব্দের প্লেটোর ডায়ালগ টাইমাউস এন্ড ক্রিটিয়াসে।

প্লেটো এর মতে, প্রায় ৯০০০ বছর আগে অ্যাটলান্টিস ছিল হারকিউলিসের পিলারের পাদদেশে একটি দ্বীপ, যা এর নৌ-সক্ষমতা দিয়ে ইউরোপের অধিকাংশ স্থান জয় করেছিল। কিন্তু এথেন্স জয় করার একটি ব্যর্থ প্রয়াসের পর এক দিন ও এক রাতের প্রলয়ে এটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সাড়ে ৪ হাজার বছর আগের মিশরের পিরামিড, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইয়োনাগুনি স্মৃতিস্তম্ভের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলো বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থাপত্যটি মানুষের তৈরিও হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাগুলো নিয়ে গবেষণা চালানো লেখক গ্রাহাম হ্যানককের মতে, এই স্মৃতিস্তম্ভটি মানবজাতিকে এত বিশাল কাঠামো নির্মাণে সক্ষম বলে মনে করার অনেক আগেই একটি উন্নত সমাজ দ্বারা নির্মিত হতে পারে।

এই দাবি যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সময়রেখাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং প্রাচীন মানব ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে নতুন আকার দিতে পারে।

পিরামিডটির পাথরের পরীক্ষা করে দেখা গেছে যায়, এটি ১০,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট

গবেষণা বলছে, মিশরের পিরামিডের আনুমানিক বয়স ৪০০০ বছর। তাইওয়ানে পানির নিচে ইয়োনাগুনি পিরামিডের খোঁজ পাওয়া এই অঞ্চলটি ১২,০০০ বছরেরও বেশি আগে তলিয়ে যায়।

এই পিরামিডটির পাথরের পরীক্ষা করে দেখা গেছে যায়, এটি ১০,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে তৈরি হয়েছে নানান প্রশ্ন। তবে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

সূত্র: ডেইলি মেইল ও নিউ ইয়র্ক পোস্ট