পাগলা মসজিদে দানের পরিমাণ বেড়েই চলছে। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক ‘‘পাগলা মসজিদে’’ র দান সিন্দুক খুলে দেশীয় টাকা, ডলার, ইউরো, পাউন্ড, রিয়ালসহ বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কাকারও পাওয়া গেছে। ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড।
দান বাক্সে এবার পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। টাকাগুলো ২০ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশি নিরাপত্তায় রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, ২২০ জনের একটি দল দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা এ টাকা গণনার কাজে অংশগ্রহণ করেন। দানবাক্সে দেশি নগদ টাকা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
৪ মাস ১০ দিন পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খোলা হয় ৯টি দানবাক্স। ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্স। তখন ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া যায়।
সাধারণত ৩ মাস পর পর দান সিন্দুক খোলা হলেও এবার ৪ মাস ১০ দিন পর ৯টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খোলা হয়। ১০টি দানবাক্সে পাওয়া যায় রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষে রাত দেড়টার পরে টাকার পরিমাণ জানানো হয়।
পাগলা মসজিদ নূরানী কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১১২ জন শিক্ষার্থী, স্থানীয় রুপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা কর্মচারির পাশাপাশি দুই শতাধিক মানুষ টাকা গণনার কাজে সহায়তা করেন।
![](https://i0.wp.com/www.journalsmonitor.com/wp-content/uploads/2024/04/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6-1.jpg?resize=600%2C400&ssl=1)
দানের টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে খোলা একটি ব্যাংক একাউন্টে। প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও নানা আয়োজন।
ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের দানের অর্থ নয়ছয় করার কোনো সুযোগ নেই। সুক্ষ্মভাবে ও পাই পাই করে প্রতিটি টাকার হিসাব রাখা হয়। প্রতিবার টাকাগুলো গুনে ব্যাংক হিসাবে জমা রাখে মসজিদ কমিটি।
দান সিন্দুক থেকে গত বছর মোট ২১ কোটি, ৫৬ লাখ, ২ হাজার ৩৫৮ টাকা পাওয়ার হিসেবে দিয়েছিল পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তবে মসজিদের তহবিলে মোট কত জমা আছে তা প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার লভ্যাংশ থেকে গরীব, অসহায় লোকদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
![পাগলা মসজিদ](https://i0.wp.com/www.journalsmonitor.com/wp-content/uploads/2024/04/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A6-2.jpg?resize=600%2C400&ssl=1)
জনশ্রুতি আছে, কোন এক সময় আধ্যাত্মিক পাগল এক সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জে। কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল জনপদের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়েছিলেন।
ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর এখানে একটি মসজিদ নির্মিত হয়। যা ‘‘পাগলা মসজিদ’’ হিসেবে সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত।
পাগলা মসজিদে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়
পাগলা মসজিদে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এমন আশা নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার দান করে যান।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার হাজারো মানুষের ঢল নামে পাগলা মসজিদে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে এখানে তাদের মনের আশা পূর্ণ করার জন্য।
এবার অর্থ, স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি চিঠিও জমা পড়ে দান বাক্সে। অনেকে তার মনের মানুষকে পাওয়ার জন্যও এই দান বাক্সের মাধ্যমে আল্লাহর দরবার আর্জি পাঠায়।