অপরাধীর নাম জেফরি এপস্টাইন। খাতার পাতায় হুড়হুড়িয়ে আসছে শত শত নাম। বৃহত্তম যৌন চক্রের তদন্তে উঠে আসছে রাঘব বোয়ালদের নাম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের যুবরাজ থেকে প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর যৌন অপরাধ মামলায় বিশ্বের তাবড় প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে জেফরি এপস্টাইন ইস্যুতে।
গোপন রাখা হয়েছিল প্রতিবেদন
আদালতে জমা পড়া প্রতিবেদনে ১৭০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে নাম রয়েছে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের যুবরাজ প্রিন্স অ্যান্ড্রু এমনকি প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়েরও।
এতোদিন এই প্রতিবেদনে গোপন রাখা হয়েছিল। জেলা আদালতের বিচারক লরেটা এ প্রেস্কার নির্দেশে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর তোলপাড় বিশ্ব মিডিয়া।
যৌনদাসী কেনাবেচা নিয়ে জেফরি এপস্টাইন ঘিরে যে বিতর্ক, তাতে তাঁর গার্ল ফ্রেন্ড জিসলেন ম্যাক্সওয়েলেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহে জেফরি এপস্টাইন সহযোগী ছিলেন জিসলেন।
২০১৫ সালে দায়ের করা হয় মামলা
২০১৫ সালে জেফরি এপস্টাইন এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়, তারই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বিশ্বের তাবড় ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। রয়েছে বিস্ফোরক তথ্যসমূহ।
বিল ক্লিনটন ও জেফরি এপস্টাইনকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। জেফরি প্রাইভেট জেট ব্যবহার থেকে তাঁর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দ্বীপে বিল ক্লিনটন গিয়েছিলেন বলে তদন্তের প্রতিবেদনে তার নাম উল্লেখ রয়েছে।
কম বয়সী মেয়েদের পছন্দ বিল ক্লিনটনের
জেফরি এপস্টাইন ওই দ্বীপেই প্রভাবশালীরা ফূর্তি করতে আসতেন বলে অভিযোগ করেছেন ভার্জিনিয়া রবার্টস ওরফে ভার্জিনিয়া জিওফ্রে। ওই দ্বীপে দুই নারীর সাথে ক্লিনটন সময় কাটান বলে দাবি করেছেন তিনি।
অভিযোগকারী জোয়ানা সোবার্গ জানিয়েছেন, ‘বাচ্চা মেয়ে’রাই বিল ক্লিনটনের পছন্দ বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন জেফরি এপস্টাইন। আমেরিকার আর এক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথেও জেফরি এপস্টাইন দেখা-সাক্ষাতের কথা উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
রয়েছে মাইকেল জ্যাকসন, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও স্টিফেন হকিং
১০০০ পাতার ওই প্রতিবেদনে ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নামও রয়েছে। জোয়ানা জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে জেফরির বাড়িতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর হাতে পড়েন তিনি। প্রথম সাক্ষাতেই তাঁর সাথে অভব্য আচরণ করেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। অনুমতি না নিয়েই তাঁকে স্পর্শ করেন।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে নাম রয়েছে প্রয়াত পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন, জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ডেরও। তবে মাইকেল জ্যাকশন যৌনকর্মী জোয়ানার থেকে ‘মাসাজ’ নেননি বলে জানান তিনি।
স্টিফেন হকিং ও প্রায় ২০ জন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীও জেফরির ওই দ্বীপে গিয়েছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। জীবদ্দশায় দীর্ঘ সময় হুইল চেয়ারেই আবদ্ধ ছিলেন স্টিফেন হকিং। তবে নাবালিকা মেয়েদের সাথে তিনি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
আরেক যৌনকর্মী ভার্জিনিয়া দাবি করেন, এক নাবালিকার সাথে মিলে স্টিফেন হকিংয়ের সাথে তাঁকে সঙ্গমে বাধ্য করেন জেফরি। সেই নিয়ে জিসলেন ও জেফরির মধ্যে ইমেলে কথা হয়, যেখানে জিসলেনকে বিষয়টি অস্বীকার করতে অনুরোধ জানান জেফরি।
মেলিন্ডা বিল গেটসের দাম্পত্যে চিড়ের সূত্রপাত
মাইক্রো সফটের প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের বিল গেটসও জেফরি এপস্টাইন এর দ্বীপে একাধিকবার রং লীলা করতে গিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে দাম্পত্যে তখনও চিড় ধরেনি বিল গেটসের, সেই সময় মিলা আন্তোনোভার সঙ্গে নাম জড়ায় গেটসের। জেফরি এপস্টাইনের সাথে বিলের যোগাযোগও বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী বলে পরবর্তীতে মন্তব্য করেন মেলিন্ডা।
তালিকায় গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিন, জনপ্রিয় মডেল নেওমি
প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিন, জনপ্রিয় মডেল নেওমি ক্যাম্পবেলেরও নামও উল্লেখ রয়েছে মামলার প্রতিবেদনে। নেওমির নাম ভাঙিয়ে অল্পবয়সী মেয়েদের জেফরি ফাঁদে ফেলতেন বলে দাবি করা হয়েছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক অ্যালান দর্শোউইৎজ ফ্লোরিডায় যৌনদাসী কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন। এমনকি একাধিক মেয়ের ধর্ষণ দেখতেও অংশ নিতেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জেফরি এপস্টাইন এর রহস্যজনক মৃ্ত্যু ঘিরে শোরগোল
মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টাইন এর বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ ছিল। উপার্জনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকাদের সঙ্গমে বাধ্য করা, ধর্ষণ-নিগ্রহ করাসহ বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহ করতেন।
নিজেকে ‘সরবরাহকারী’ উল্লেখ করেছিলেন জেফরি এপস্টাইন। ক্ষমতাশালী নেতা, শিল্পপতিদের নাবালিকা মেয়ে, যুবতী নারী সরবরাহ করতেন। তবে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ থাকলেও, মাত্র দু’টি মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন জেফরি এপস্টাইন।
২০১৯ সালের ১০ আগস্ট কারাগারে থাকার মধ্যে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। আগেও কারাগারে আক্রান্ত হন জেফরি এপস্টাইন। তাই রহস্যমৃ্ত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় পুরো আমেরিকাজুড়ে। তাকে খুন করা হয়েছে বলেও ওই সময় দাবি ওঠেছিল।
দীর্ঘ হতে চলেছে যৌন তালিকা
জেফরি এপস্টাইন মারা যাওয়ার পরে সেই মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে বিচারকের আদেশে তদন্ত কর্মকর্তা ওই মামলার প্রতিবেদন আদালত প্রকাশ করতে থাকে। সেই তালিকায় দীর্ঘ হতে চলেছে জেফরি এপস্টাইন যৌন তালিকা।
আমেরিকার বিলাসবহুল বাড়িতে চলত জেফরি এপস্টাইনের যৌন ব্যবসা। খদ্দেরদের স্বর্গসুখ দিতে কোনো কমতি রাখেনি যৌন ব্যবসায়ী জেফরি এপস্টাইন (Jeffrey Epstein)।
২০০৫ সালে গ্রেফতার হয় জেফরি এপস্টাইন
তিন দশক ধরে যৌন ব্যবসার সাথে জড়িত জেফরি এপস্টাইন। আপাতত তার যৌন ব্যবসার খদ্দেরদের তালিকায় ১৭০ জন নামিদামি লোকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
ফ্লোরিডার পাম বিচে বাংলোয় চলত যৌন ব্যবসা। তদন্তে উঠে এসেছে ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের যৌন পেশায় নামতে বাধ্য করা হতো। ২০০৫ সালে জেফরি এপস্টাইনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালে জেলে আত্মহত্যা করে জেফরি এপস্টাইন।
তবে জেফরি এপস্টাইন মারা গেলেও তার লেখা যৌন খদ্দেরদের তালিকা রয়ে গেছে। তদন্তের পরতে পরতে উঠে আসছে সেই সব খদ্দেরদের নাম। আরও নাম বের হবে। কারণ তালিকা পূর্ণাঙ্গ বের হয়নি। তবে এতেই যা সব নাম এসেছে তাতে বিশ্ববাসী অবাক।
বাচ্চা মেয়েদের নিয়ে জোর করে যৌন ব্যবসার এই তালিকায় জেফরি এপস্টাইনের ক্লায়েন্ট লিস্টে নাম আছে খ্রীষ্টান ধর্মগুরু পোপের। নাম জড়িয়েছে ক্যামেরন ডিয়াজ, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর। আরও অনেক নাম।
তবে চমকের পর চমক স্টিফেন হকিংয়ের নামে। বিশ্ববাসী হতচকিত। বিশ্বের সৃষ্টি রহস্য, অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণায় হকিং একজন কিংবদন্তি। প্রায় পুরো জীবনই তিনি হুইল চেয়ারে কাটিয়েছেন।
স্টিফেন হকিং প্রশ্নে বিতর্ক তোলপাড় চলছে। পোপের নাম নিয়েও বিতর্ক বাড়ছে। সাবেক দুই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এর বিরুদ্ধে যৌন বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু ধর্মগুরু পোপ ও স্টিফেন হকিংয়ের নামের কাছে তারা ম্লান।
আলোচনায় লিটল সেন্ট জেমস
লিটল সেন্ট জেমস হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের ব্যক্তিগত ছোট দ্বীপ, যেটি বৃহত্তর সেন্ট থমাস দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীপটির মালিকানা ছিল আমেরিকান দোষী সাব্যস্ত শিশু যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইন।
জেফরি এপস্টাইন এর মালিকানার সময়, দ্বীপটি স্থানীয়ভাবে “আইল্যান্ড অফ সিন” ও “পেডোফাইল আইল্যান্ড”। এই দ্বীপেই রঙ্গলীলায় মেতে থাকতেন ধনকুবের, সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা