জনপ্রিয়তার নতুন বিশ্বরেকর্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর

জনপ্রিয়তার নতুন বিশ্বরেকর্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর

জনপ্রিয়তার নতুন বিশ্বরেকর্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ক্লাব থেকে আন্তার্জাতিক ফুটবল, নিজের ক্যারিয়ারে একাধিক বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন পর্তুগিজ এই মহাতারকা। মাঠ বা মাঠের বাইরে, সব জায়গা যেন রাজা তিনিই।

এবার ফুটবল মাঠ থেকে ছেড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন রেকর্ড করলেন সিআর সেভেন। বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যিনি নেট দুনিয়ায় ১ বিলিয়ন ফলোয়ার লাভ করলেন। কিংবদন্তি এই ফুটবলারের জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, নেট দুনিয়ায় যথেষ্ট সক্রিয় তিনি।

এই রেকর্ড বিশ্বে আর কোনও অ্যাথলেটের থাকা তো দূরের কথা, রোনালদোর ধারে কাছেও কেউ যেতে পারেননি এখনও।

রোনালদো শীর্ষে আছেন অনেক দিন ধরেই:

সামাজিক মাধ্যমে অনুসারী সংখ্যায় রোনালদো শীর্ষে আছেন অনেক দিন ধরেই। দুইয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী সেলেনা গোমেজের সঙ্গে তাঁর অনুসারী সংখ্যার ব্যবধান এবার আরও বেড়ে গেল।

বর্তমানে সেলেনার অনুসারী রোনালদোর চেয়ে ২৯ কোটি ১৮ লাখ কম। শীর্ষ পাঁচের অন্য তিনজনও সংগীতশিল্পী। তারা হলেন যথাক্রমে তিন, চার ও পাঁচে আছেন জাস্টিন বিবার, টেলর সুইফট ও আরিয়ানা গ্রান্ডে।

সিআর সেভেনের ১ বিলিয়ন ফলোয়ার:

সিআরসেভেনের ১ বিলিয়ন ফলোয়ারের মধ্যে ইনস্টাগ্রামে ৬৩৯ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ফেসবুকে রয়েছে ১৭০ মিলিয়ন। এক্স হ্যান্ডেলে রয়েছে ১১৩ মিলিয়ন। সদ্য খোলা ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে ৬০.৫ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার।

চলতি মাসের শুরুতেই নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন রোনালদো। প্রথম দিনেই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার পৌঁছে যায় ১৫ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারে। এক সপ্তাহের মধ্যে তা পৌঁছে যায় ৫০ মিলিয়নে।

ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:

নিজের ফলোয়ার ১ বিলিয়নে পৌঁছানোর পর ভক্তদের সমর্থন জানিয়ে আবেগঘন পোস্ট করেছেন সিআর সেভেন। সমর্থন ও তাঁর প্রতি বিশ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এক্স হ্যান্ডেলে নিজের পোস্টে রোনালদো সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। এটা শুধু একটা সংখ্যা নয়, আমাদের সবার ভাগ করে নেওয়া আবেগ।

মাদেইরার রাস্তা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত আমি সবসময় আমার পরিবারের জন্য এবং আপনাদের জন্য খেলেছি। আপনারা প্রতিটি পদক্ষেপে আমার সঙ্গে ছিলেন।

তিনি আরও লিখেন, সমর্থনের জন্য ও আমার জীবনের অংশ হওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। সেরাটা এখনও আসতে বাকি। আমরা একসঙ্গে এভাবেই ইতিহাস গড়তে থাকব।

ক্যারিয়ারে ৯০০ গোল করে ইতিহাস:

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বর্তমানে সৌদি আরবের আল নাসেরের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন। এক সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাব ফুটবলে অনেক রেকর্ডই গড়েছেন।

কিছুদিন আগেই নিজের ক্যারিয়ারে ৯০০ গোল করে ইতিহাস গড়েন। এর আগে এমন রেকর্ড কোনো এটলেট করতে পারেনি। এবার তাঁর টার্গেট ১০০০ গোল। ৩৯ বছরে এসেও টানা গোল করে চলেছেন তিনি।

বলে রাখা ভাল, বিশ্বজুড়ে শুধু ফুটবল নয় প্রায় সব খেলাতেই অন্যতম অনুপ্রেরণা রোনালদো। রোনালদোর সেলিব্রেশন ফুটবলের বাইরেও সব খেলাতেই চোখে পড়েছে।

৩৯ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ তারকাকে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন অনুসরণ করেন, এই প্রশ্ন নেট দুনিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর নেই। তার জনপ্রিয়তার বহু কারণ রয়েছে।

প্রথমত,

ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবল একমাত্র খেলা যেটির প্রচলন রয়েছে বিশ্বের সব দেশেই। ফলে ফুটবলের বৈশ্বিক দর্শক সংখ্যা শত শত কোটি। সেই ফুটবলের পেশাদার বৃত্তে রোনালদোর খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানইউর মতো জায়ান্ট ক্লাবে।

দ্বিতীয়ত,

শুধু বড় ক্লাবেই নয়, পর্তুগীজ ফুটবলের যে নবজাগরণ সেটির নেতৃত্বে ছিলেন রোনালদো।

তৃতীয়ত,

পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকার রয়েছে আরও বিশেষ কিছু গুণাবলী। শৃংখল জীবনযাপনের জন্য তার রয়েছে বিশেষ সুখ্যাতি। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

চতুর্থত,

দেহ ফিটনেসের দিক থেকে যে কোন অ্যাথলেটের কাছে রোনালদো একজন উদাহরণ। ফলে ইনজুরি কখনও তাকে ভোগাতে পারেনি। যার কারণে ইউরোপে অস্তমিত সূর্য হয়ে যাওয়ার পরও রোনালদো মধ্যপ্রাচ্যে আসার পর থেকেই, আল নাসরের হয়ে দারুণ ফর্মে আছেন।

পঞ্চমত,

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে শুরু থেকেই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন পর্তুগিজ তারকা। ধীরে ধীরে তিনি পরিণত হন বিশ্বজোড়া সুপারস্টারে। পূর্বসূরীদের অনুসরণে রোনালদোও নাম জড়িয়েছেন বিশ্বের নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডের সঙ্গে।

ষষ্ঠত,

বর্তমান সময়ের অনেক বড় স্টাইল আইকন রোনালদো। তার হেয়ারকাট ও ফ্যাশন বিশ্বজোড়া ভক্তদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুলের স্টাইল থেকে শুরু করে জামাকাপড় সবকিছুতেই নিজস্বতা ধরে রেখেছেন সিআর সেভেন।

তবে এই প্রজন্মের স্টাইল আইকন হয়েও, রোনালদোর শরীরে কোনো ট্যাটু বা কোন ধরনের উল্কি নেই। সমসাময়িক প্রায় সব বড় তারকা–লিওনেল মেসি, নেইমার কিংবা ইব্রাহিমোভিচ সবাই যেখানে মজেছেন ট্যাটুর প্রেমে, সেখানে রোনালদোর শরীরে একটি ট্যাটুও দেখা যায় না।

এর কারণ রক্ত দেয়ার জন্য ট্যাটু করেন না রোনালদো। রক্তদাতা হতে হলে যে ট্যাটু করানো যাবে না এমন বাধ্যবাধকতা অবশ্য নেই। তবে, ডাক্তাররা সাধারণত রক্তদাতাদের ট্যাটু না করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রস ট্যাটু করার ১২ মাসের মধ্যে রক্ত দেয়াকে অনুৎসাহিত করে থাকে। শুধু রক্তই না, পর্তুগিজ মহাতারকা রক্তের প্লাজমাও দান করেন মাঝে মাঝেই।

এসব কারণেই বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়েই চলেছে। তার খেলোয়াড়ি জীবনের পাশাপাশি মানবিকতা দিকও তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে বলে মনে করেন তার ভক্ত অনুরাগীরা।