
এই কারখানার মালিক হতে লাগে মাত্র ৫ হাজার টাকা
হ্যাঁ অবাক হলেও সত্যি। মাত্র ৫ হাজার পুঁজি খাটিয়ে আপনি হয়ে যান একটা কারখানা মালিক। যারা অল্প টাকায় ব্যবসা খুঁজছেন তাদের জন্য কিন্তু একটি দারুন সুযোগ।
কিভাবে কাগজের ব্যাগ ব্যবসা শুরু করবেন:
বিপণিবিতান ও ছোটখাটো দোকানপাটে সারা বছর কাগজের শপিং ব্যাগের বা ঠোঙ্গার প্রয়োজন হয়। সারা দেশের কেনাকাটায় জনপ্রিয় এ ধরনের ব্যাগ।
শপিংয়ের জন্য ক্রেতারা কাগজের ব্যাগকেই বেশি পছন্দ করেন। অর্থাৎ কাগজের শপিং ব্যাগের চাহিদা সব সময়ই থাকে। তাই স্বনির্ভর কর্মসংস্থান ও কম পুঁজির উপায় হিসেবে আপনিও এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
বাজার সম্ভাবনা:
কাগজের শপিং ব্যাগের চাহিদা সব সময় থাকে। সব জায়গায় কাগজের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজের ব্যাগ অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে থাকে।
এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাদের অর্ডার অনুযায়ী ব্যাগ তৈরি করে আয় করা সম্ভব।
এছাড়া মিষ্টির দোকানী, কাপড়ের মহাজন, কনফেকশনারি ও অন্য বণিকরা তাদের দরকার মোতাবেক কাগজের ব্যাগ ক্রয় করেন।
তাছাড়া যে কোনো মার্কেটের সামনে এই ব্যাগ বিক্রি করা যায়। ভাসমান বিভিন্ন পণ্য বহনের কাজে এই ঠোঙা খুবই দরকারি।
সরকারি অনুমতির প্রয়োজন হয় কি না?
আসলে যে কোন ব্যবসাতেই সরকারী অনুমতির প্রয়োজন হয়। আজকাল অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্যেও তো অনুমতি লাগে।
তবে ব্যবসাটি যদি কোন বড় ই কমার্স সাইটে কোন একটা স্টোর নিয়ে শুরু করেন তবে কোন সরকারী অনুমতির প্রয়োজন নেই। অবশ্য সতর্কতা হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স করে নেয়া ভালো।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- হাতুড়ি
- পাঞ্চ মেশিন
- গামলা
- কাঁচি
- ফরমা
- কাঁচামাল
- কাপড়
- আঠা
- সুতা
- পিচবোর্ড বা শক্ত কাগজ
- আইলেট
- স্ক্রিন প্রিন্ট
- সেলাই মেশিন,
- তারা প্রভৃতি
ঠোঙ্গা বানানোর পদ্ধতি:
পঞ্চাশ কেজি ঠোঙ্গা বানাতে লাগবে তিন কেজি আটার সঙ্গে পানি মিশিয়ে আগুনে তাপ দিয়ে বানানো আঠা। দুই কেজি, দেড় কেজি, আধা কেজি ও পোয়া কেজি এই চার সাইজের ঠোঙ্গা বেশি চলে।
তাই কাগজ কিনে যে ঠোঙ্গা বানাবেন তা মাপমতো কেটে নিতে হবে। আকার ঠিক রাখতে প্রয়োজনে বাজার থেকে নির্দিষ্ট মাপের একটা করে ব্যাগ বা ঠোঙ্গা সংগ্রহে রাখতে পারেন।
ব্যাগ এর তলায় দেওয়ার জন্য সাইজমতো চারকোণা কাগজ কেটে নিতে হবে। একপাশে ব্যাগের ও তলার কাগজ অন্যপাশে আঠা নিয়ে বসে যেতে হবে।
সাইজ করা কাগজগুলো গোল করে দুই মাথা আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। অনেকটা পাইপের মতো দেখাবে। চাপ দিয়ে ভাঁজ করে ওজনদার কিছু দিয়ে চেপে রাখতে হবে।
চেপে রাখা কাগজের ভাঁজ পড়া দুই পাশ আঙুলে চাপ দিয়ে পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে। এখন আড়াআড়ি দুই পাশ ভেতরের দিকে আর দুই পাশ বাইরের দিকে থাকবে।
চারকোনা করে কেটে রাখা একটা কাগজ ভেতরের ভাঁজের ওপরে রেখে বাইরের দিকে থাকা কাগজ দুটি দিয়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। হয়ে গেল কাগজের ব্যাগ। এক শ করে ব্যাগ বেঁধে ফেললেই বিক্রি উপযোগী হয়ে যাবে।
ব্যবসায়িক সুবিধা:
এ ব্যবসায় তুলনামূলক কম পুঁজি। তাই কম টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করা যায়। ইচ্ছে করলে পরিবারের সবাই মিলে ব্যবসাটি চালানো যায় তাই এতে করে কর্মীর দরকার হয় না।
এ ব্যবসায় লাভ তুলনামূলক অনেক বেশি এবং সুবিধামতো স্থানে থেকে বিক্রি করা যায়। খুব বেশি টাকাা লেনদেন হয় না বলে দায় কম থাকে।
কিভাবে ও কোথায় বিক্রি করবেন?
আপনি সাধারণত কোন বাজার বা সুপার শপে অথবা স্কুল কলেজ বা মাদ্রাসার পাশে পণ্য বিক্রি করতে পারেন। তবে আপনি যদি পাইকারি বিক্রয় করতে চান তাহলে স্টেশনারি দোকানে সরবরাহ করতে পারেন।

আশেপাশে যারা খাতা কলম বিক্রি করে তাদের কাছে বিক্রয় করতে পারেন। তাছাড়া শহরের রাস্তায় বিক্রি করতে চাই নিজে অথবা অন্য কারো মাধ্যমে বিক্রি করা যেতে পারে।
আপনার পণ্য নামের জন্য আপনি পণ্যগুলো অন্যদের চেয়ে একটু কম দামে দিতে পারেন। এতে করে আপনার গ্রাহক বাড়বে আর গ্রাহক বাড়লে লাভও বাড়বে।
যে সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
বানানোর সময় ভাঁজটা ঠিকমতো দিতে হবে অন্যথায় এলোমেলো হলে ব্যাগটি সুন্দর হবে না। ব্যাগে যেসব অংশে আঠা লাগানো হয়, তা ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
ভালোমতো না শুকালে জোড়া দেওয়া জায়গার কাগজ খুলে যেতে পারে। ব্যাগের নিচে ও ওপরে শক্ত কাগজ লাগাতে হবে। নতুবা ছিঁড়ে যেতে পারে। সুন্দর ও টেকসই এর জন্য এগুলো মনে রাখতে হবে।
পুঁজি বা বিনিয়োগ:
পুঁজির বিষয়টা আসলে নির্ভর করে কত বড় করে ব্যবসা শুরু করতে চান তার ওপর। যে কোন ব্যবসায় পুঁজি যত ইচ্ছে ততো বিনিয়োগ করা যায়।
যদি সনাতন পদ্ধতিতে এই ব্যবসা চালু করতে চান তবে ৫ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করলেই চলবে। প্রাথমিক বিনিয়োগ এতেই যথেষ্ট।
অন্যদিকে যেকোন ধরনের একটা প্রিন্টিং মেশিন নিয়ে কাজ করতে চাইলে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা মেশিনের কোয়ালিটি ভেদে বিনিয়োগ করতে হতে পারে।
লাভ:
কাঁচামালের দরদাম ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। চাহিদা অনুযায়ী তৈরিকৃত শপিং ব্যাগ যত তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করা হলে দ্রুত বিক্রি হবে
যোগাযোগ খুবই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে উদ্যোক্তার যোগাযোগ দক্ষতা যত ভালো ব্যবসায় তিনি দ্রুত উন্নতি সাধন করতে পারবেন।

সঠিকভাবে করতে পারলে এই ব্যবসা ক্ষতির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ বাজারের চাহিদা কোনও প্রতিষ্ঠান বা বড় দোকানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে মাসিক উপার্জন নিশ্চিত হবে।
আপনি কত খাম তৈরি করে বিক্রি করতে পারছেন তার ওপর এই অঙ্ক অনেকটাই নির্ভর করছে৷ গাণিতিকভাবে এটি সহজেই অনুমেয়।
আসুন একটা সরল হিসাব করি। আপনি যদি প্রতিদিন ৫০ টা দোকানে ১০০ পিস করে (বড় সাইজ) ঠোঙ্গা দিতে পারেন, প্রতিটি ঠোঙ্গায় যদি লাভ থাকে ২৫ পয়সা। তাহলে ৫০ দোকানে ৫০০০ পিস ঠোঙ্গা থেকে লাভ আসবে ১২৫০ টাকা। ১০০ দোকানে দিতে পারলে দৈনিক লাভ আসবে ২৫০০ টাকা।
প্রশিক্ষণ:
বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। কাগজের ব্যাগ তৈরি করা শেখার কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তবে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাগ তৈরির নিয়ম হাতে-কলমে শিখে নিতে পারেন।
ইউটিউবেও এ সংক্রান্ত অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। ধৈর্যশীল হলে এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন।
আপনি চাইলে পার্ট-টাইমে এই ব্যবসা করতে পারেন অথবা ফুল-টাইমও করতে পারেন৷ গ্রিটিংস কার্ডের জন্য খাম, বা ক্যুরিয়রের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাগ বা খাম, অথবা অফিস বা অনুষ্ঠানের জন্য, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন কাগজে তৈরি করা হয় ব্যাগ বা খাম৷
তাই সেই অনুযায়ী কাগজ কিনতে হবে৷ চাইলে ডিজাইনার খামও তৈরি করতে পারেন৷ এভাবে বাড়িতে বসেই কম পুঁজিতে আপনি আপনার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন৷
লেখক: রোকন রাইয়ান, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, ইসলামী বিশ্লেষক, প্রতিষ্ঠাতা কওমি উদ্যোক্তা ও স্বত্বাধিকারী পরিপাটি।