
ইউক্রেন যুদ্ধ: ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি রাশিয়ার!
হেডিং দেখলে প্রথমে হয়তো অনেকে ধাক্কা খাবে। কারণ রাশিয়া গোটা পশ্চিমা বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে মস্কোর ওপর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধও আরোপ করে।
মূলত রাশিয়াকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলতেই ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকাসহ পশ্চিমা।
তবে পশ্চিমাদের এই পরিকল্পনা রাশিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবদরা বলছেন, ইউক্রেনে হামলার পর ও যুদ্ধকালীন সময়ে ব্যয়ের চেয়ে বেশিই আয় করছে রাশিয়া।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে প্রতিদিন প্রায় ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যয় হচ্ছে মস্কোর।
তবে রাশিয়া একই সময়ে ইউরোপে তেল বিক্রি করে প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলার আয় করছে। এই তথ্য অনেকটা হতবাক করে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে।
রণ কৌশলবিদরা বলছেন, এই হিসেবে প্রথম ১০০ দিনে রাশিয়ার খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে তেল ও গ্যাস রফতানি করে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার আয় করেছে পুতিনের দেশ।

এর মধ্যে ৭০০ কোটি ডলার আয় করেছে ফসিলজাত জ্বালানি থেকে, যার ৬১ ভাগই আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।
এর বাইরে ভারত, ফ্রান্স, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবও রুশ জ্বালানির আমদানি বৃদ্ধি করেছে।
বৈশ্বিক সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’র এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংস্থাটির তথ্যানুসারে, মার্চ মাসে রাশিয়া প্রতিদিন একশ কোটি ডলার আয় করছিল তবে বর্তমানে তা মাইনাসের দিকে বা কমার দিকে।

আর প্রতিদিন রাশিয়ার ব্যয় ছিল প্রায় ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তাই প্রথম এক শ দিনে রাশিয়ার তেল-গ্যাস থেকে আয় ছিল যুদ্ধ ব্যয়ের তুলনায় বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বর্তমানে বিপুল পরিমাণে ভারতে পাঠিয়ে পরিশোধন করছে। তারপর তা আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
ভারতে রুশ অপরিশোধিত তেল রফতানি যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে ১৮ গুণ বেড়েছে বলে বৈশ্বিক জ্বালানিবিষয়ক সংস্থাটি ওই প্রতিবেদনে জানায়।

রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর তেলের নতুন নতুন বাজার খুঁজছে শুরু করে। তারা সফলও হয়েছে এই ক্ষেত্রে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলোর চালান যাচ্ছে জাহাজে করে আর সেসব জাহাজের মালিক ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আমেরিকার কোম্পানি।
রাশিয়া-ইউক্রেন এ যুদ্ধ শুরু করার পর রাশিয়ার অর্থনৈতিক সামাজিক ও বাণিজ্যিক খাট ভেঙ্গে পড়বে বলে শুরুতে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল বাস্তবে তা হয়নি।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিন একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেমন কোন ক্ষতি করতে পারে নি।
শুধু জ্বালানি ক্ষেত্রেই রাশিয়ার জয়জয়কার অবস্থা নয় এর পাশাপাশি রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম অনেক বেড়েছে।
তবে পরাশক্তিধর ও পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর বিশ্বের অর্ধেক দেশই জ্বালানি ও খাদ্যশস্য ওপর নির্ভরশীল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অনেক দেশে।
আফ্রিকা থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে এশিয়া, আমেরিকা থেকে এশিয়া প্রত্যেকটা মহাদেশের রাষ্ট্রই মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে।
লেখক: সাইফ নাসির, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট।